মুক্তিযুদ্ধে পাশে দাঁড়ানোর বিনিময় ভারত বাংলাদেশ থেকে কড়ায়গণ্ডায় আদায় করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ১৭ বছর ভারতকে শুধু দিয়েই গেছে। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেজন্য কৃতজ্ঞ। তবে বিগত বহু বছর তারা কড়ায়গণ্ডায় প্রতিদান আদায় করেছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার টুইটে যে মনোভাব প্রকাশ করেছেন সেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যে ষড়যন্ত্র রেসকোর্সে হয়েছিল সেটিই। গত ১৭ বছরে ভারতকে বাংলাদেশ শুধু দিয়েই গেছে। আজও ফারাক্কার পানির সমস্যা নিরসন হয়নি। সীমান্তে মানুষ মারা হচ্ছে। ভারত বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার সৃষ্টি করে। তারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, বলা হয়েছে বাংলাদেশ দিয়ে ভারত ট্রানজিট নিলে বাংলাদেশ নাকি সিঙ্গাপুর হবে। অথচ আখাউড়া দিয়ে ভারতের এত ট্রাক গেলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি শুধু কমছেই। বিগত বছরগুলোতে আমাদের শুধু ভুল বোঝানো হয়েছে।
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে আছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ভারতের বিষয়ে দেশপ্রেমিক সব মানুষের বক্তব্য একই। ষড়যন্ত্র অনেক আগেই শুরু হয়েছে, তবে কারো শেষ রক্ষা হয়নি। প্রত্যেকটা কাজের হিসাব কিন্তু আগামী প্রজন্মের কাছে দিতে হবে। কেউ হয়ত নেদারল্যান্ডস গেছেন, কলকাতা গেছেন। কেউ চট করে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সৎ সাহস থাকলে ঢোকেন, বিচারের মুখোমুখি হন।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার বহু বছর পর হয়েছে। সুতরাং আগামীতেও সেরকম হবে না, সেটি ভাবার কিছু নেই। তারা (আওয়ামী লীগ) বাড়িঘর দখল ও গায়েবি মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। আল্লাহ তার বান্দাকে অবকাশ দেন যদি কেউ তার ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু তা না হলে কি পরিণতি হয় সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এত পরিমাণ গুম, খুন ও লুট করেও রক্ষা হয়নি। নিজেকে বাঁচানোর ভয়ে আপনি (সালমান এফ রহমান) নিজের দাড়ি কামিয়েছেন। অতএব অহংকার পতনের মূল।
তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্র মেরামত করার লক্ষ্যে ৩১ দফা নিয়ে কাজ করছি। অতি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এরশাদের পতনের সময় কতদিন পর নির্বাচন হয়েছিল সেটি সবারই মনে থাকার কথা। নির্বাচন করতে কতদিন লাগে সেটি দেশের মানুষ জানে। যেহেতু পতিত স্বৈরাচার সরকার সাড়ে ১৫ বছরে দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, সেজন্যই সব রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করছে। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, স্বাধীনতার মাস ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের স্বাধীনতার গৌরব ছিনতাই করতে চায়। বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ যুদ্ধ করে অপরিসীম ত্যাগ শিকার করেছেন। আমরা নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যকে ঘৃণা করি, প্রত্যাখ্যান করি। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে সেটি কেউ বিনষ্ট করতে পারবে না। আগামীতেও সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করব, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য বাংলাদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার শামিল। রক্ত দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করলে আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তার দাঁতভাঙা জবাব দিতে পিছপা হবো না।
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, এ সরকারকে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। যদি কোনো উপদেষ্টা কিংস পার্টি গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার কল্পনা করেন, সেটি হবে ভুল চিন্তা। কারণ আমরা লড়াই করতে জানি। রাজপথে এখনো আছি।
১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মুহাম্মদ ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এমএ মান্নান, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ফিরোজ মো. লিটন।
সমাবেশ পরিচালনা করেন বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটু।