1. numanashulianews@gmail.com : kazi sarmin islam : kazi sarmin islam
  2. admin@newstvbangla.com : newstvbangla : Md Didar
বাংলায় লিমেরিকের স্বাদ - NEWSTVBANGLA
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে প্রচণ্ড চাপে নেতানিয়াহু ফিলিপাইনে সরকারি স্কুলে সশরীরে পাঠদান স্থগিতের ঘোষণা শ্রমিকদের কর্মস্থলে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও আরামদায়ক পোশাকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে : স্পিকার শেখ জামালের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ চিকিৎসকের উপর আক্রমন যেমন আমি সহ্য করবো না রোগীর প্রতি চিকিৎসকের অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুই সহোদর হাফেজকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের-শনাক্ত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে : র‌্যাব মুখপাত্র রাশিয়া পশ্চিমের বিভিন্ন অঞ্চলে রাতের বেলা ১৭টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে বান্দরবানে কুকি চিনের দুই সদস্য নিহত ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের আওতায় নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি টিআইবি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল আগামী ৯ থেকে ১১ মে এর মধ্যে প্রকাশ করা হবে

বাংলায় লিমেরিকের স্বাদ

প্রতিনিধি

 

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বলেছিলেন, ‘আঁকা হলো এমন কবিতা যা অনুভবের তুলনায় অধিক দৃশ্যমান বিষয় আর কবিতা হলো এমন চিত্রাঙ্কন যা দেখা যায় না তবে অনুভব করা যায়।’ কবিতা পাঠকের সামনে এমন দৃশ্য হাজির করে যা সে দেখতে পায় না কিন্তু অনুভব করতে পারে। নিজের পরিচিত, আপন বিষয় না হলে পাঠকের পক্ষে কীভাবে সম্ভব হবে অনুভব করা? কবিতাকে তাই পাঠকের আপন বিষয় হয়ে উঠতে হয়, মনের কথা হয়ে উঠতে হয়।

বাংলা কবিতার ইতিহাসে স্বর্ণমণ্ডিত সেসব হাতের কথা যদি ধরি, ভারতচন্দ্ররয় গুণাকর, ঈশরচন্দ্র গুপ্ত, জীবানানন্দ দাশের কথা। তারা নিজ নিজ ভঙ্গিতে মানুষের মনের কথাই বলেছেন, সময়ের কথাই বলেছেন। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল কবিতাকে আরও বৃহৎ মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কবিতা ইতিহাসের তুলনায় গভীর দার্শনিকতাকে ধারণ করে। ইতিহাস হয়ত কাজ করে সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে। কিন্তু কবিতার কাজ বৈশ্বিক।

এসব দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে পর্যালোচনা করলে ‘পঞ্চপর্ণ কবিতার বইটি পাঠকের মনে তুলে ধরবে নিজের সময়, চারপাশ, রাজনীতি, প্রেম, সমাজ, পরিবর্তন, সংকটের পরিচিত দৃশ্য। এই গ্রন্থের কবিতা বর্তমানের সীমানা ছাড়িয়ে ভবিষ্যতেরও পথ নির্দেশক। এমন কবিতা আর বাংলায় আসেনি আগে। বাংলা কবিতা বহতা নদীর মতো অনেক বাঁক বদল করেছে।

সময়ে সময়ে সেখানে পড়েছে পলি। বাঁক বদলের ক্ষণে দেখা গেছে নতুন দৃশ্যপট। নদীর মতোই কবিতা পরম্পরা বিচ্ছিন্ন হয় না। অতীতের সঙ্গে তার থাকে চেতনার মিল। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর অথবা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কবিতায় যে ভাব ও ভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন পঞ্চপর্ণে তার দেখা মেলে। চকিতে একটি দৃশ্য পাঠকের সামনে হাজির হয়, পাঠক চমকে ওঠে। এ বইয়ের কবিতাগুলো পড়তে পড়তে দুই মহান কবির কাব্যিকগুণের কথা মনে পড়ে যায়।

এমন একটি কবিতার বইও। বাঁধাই, ছাপা, কাগজ, প্রচ্ছদ, পাতার রং, কবিতার বিন্যাস মিলিয়ে বইটিও অভূতপূর্ব। সম্পূর্ণ বইটি যেন একটি উপহার বাংলা ভাষার কবিতার পাঠকদের জন্য। তার বইটি যাদের চোখে পড়েছে তারা আকৃষ্ট হয়েছেন, যারা কবিতা পড়েছেন তারা অভিভূত হয়েছেন। তাদের মন্তব্য এমেন কবিতা আগে পড়েননি তারা। ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র ‘পঞ্চপর্ণ’ নামে প্রকাশিত কাব্য গুঞ্জন তুলেছে। আশা করা যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়বে আরো। সেই রসদ তার কবিতায় রয়েছে। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে এর মৌতাত। এই কবিতায় অর্ন্তলীন বক্তব্য নিশ্চয় প্রভাবিত করবে এদেশের মানুষ ও সমাজকে। তার কবিতা ভাষ্যে লুকিয়ে আছে একটি জাতির সংকট, তিনি ইশারায় দেখিয়েছেন এর সমাধানও।

বইয়ের কাব্যগুলোকে আয়ারল্যান্ডের লিমেরিকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যদিও এগুলো পুরোপুরি লিমেরিক নয়। কারণ তিনি হুবহু আয়ারল্যান্ডের লিমেরিককে অনুসরণ করেননি। তা সম্ভবও নয়। কারণ ভাষা। তিনি বাংলা অঞ্চলের কবি, লেখেন বাংলায় তার পরম্পরা কিম্বা বেঁচে থাকার শর্ত ভিন্ন। ফলে তিনি লিখেছেন ‘পঞ্চপর্ণ’। এই কবি বলছেন, তার কবিতাগুলো ‘বিহঙ্গ হিসেবে কল্পনা করতে’।

তিনি লিখেছেন, ‘পাঠক প্রতিটি বিহঙ্গের পাঁচটি পালক বা পাখা কিংবা ডানা দেখতে পাবেন- তিনটি বড় এবং দুটি ছোট। আবার প্রতিটি কবিতা যদি তরু হিসেবে কল্পিত হয়, সেক্ষেত্রেও ছোট-বড় পাঁচটি পাতাকেই পল্লবিত দেখতে পাবেন। অন্তরের একক ভাব ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে পঞ্চধারাপাতে। এক কথায় প্রতিটি অখণ্ড ভাবের পাখি পাখনা মেলেছে পাঁচটি। গন্তব্য হয়তো পর্ণ কুটির, নয়তো স্বর্ণকুটির।’ বাংলা ভাষায় এমন কবিতা দেখা যায়নি আগে। তাই তা অভূতপূর্ব কবিতা পাঠের আস্বাদের যোগান দেবে পাঠককে।

তার বইয়ের একেবারে প্রথম কবিতাটি আগে পড়ে দেখি। ‘অঙ্গে রূপের থাকলে বাহার চুপ থাকা কি যায়/নিজের সাথে কয়- সে কথা নিজেই নিরালায়/ নিজের রূপের আয়না লয়ে/ মোহন রূপে মুগ্ধ হয়ে/ রূপের ঝিলিক যুক্ত করে কথার ভঙ্গিমায়।’ এই কবিতাটিকে ভাষার প্রস্তাব হিসেবে আমরা দেখতে পারি। যেমন ভাষা কী? আমরা যে কথা বলি সেই ভাষা কোত্থেকে আসে। সে একটা প্রণোদনা থেকে জন্ম নেয়।

সেই প্রণোদনা হলো অন্তর্গত ‘রূপ’। যা আমাদের ভেতরেই, অজ্ঞাতে অথবা গায়েব হিসাবে বাস করে। একটা অনুরণন কাজ করে সেই রূপ প্রকাশের। এই রূপ এমন রূপ যে তা প্রকাশব্যতীত স্বার্থক হয় না, রূপ হয়ে উঠতে পারে না। ফলে সে ‘কথার ভঙ্গিমায়’ প্রকাশ ঘটায় নিজের। বাইরে চলে আসে। হয়ে ওঠে রূপ, কথা বা ভাষা। প্রকাশের মধ্য দিয়ে রূপ একটা আকার পাওয়ার চেষ্টা করে। কবিতার বেলায়ও বিষয়টা এমন। কবিতা ভেতরের প্রকাশ। অর্থাৎ ভেতরে থাকলে তার প্রকাশ বাইরে ঘটবে- এক কথায় ওনার এই পাঁচটি বাক্যের শানে নযুল দেওয়া যায়।

এসব কবিতাকে আধুনিকও বলা যাবে তবে পশ্চিমা অর্থে নয়, সমসাময়িক অর্থে। সময়কে বুঝে নেওয়ার জন্য। সমাজে যে পরিবর্তন ঘটে গেছে, তা এই কবি বার বার লিখেছেনও নানা ভঙ্গিমায় তার কবিতায়- সেটা বুঝানোর জন্য আধুনিক শব্দটা ব্যবহার করা। প্রচলিত পশ্চিমা আধুনিকায়নের তিনি অবশ্য একজন প্রতিরোধকারী। বদলে যে যাচ্ছে আধুনিকতার নামে তা আসলে আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, দিব্য দৃষ্টিতে তিনি তা দেখতে পেয়েছেন এবং ছত্রে ছত্রে উল্লেখ করেছেন। আমরা যে ছিলাম ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ তা কীভাবে ডাল-ভাত হয়ে উঠল এবং সেই ডাল আর ভাত জোগাড়ও যে আমাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে এমন সহজ ও স্বাভাবিক বিষয়াদি নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন।

কবি ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘বড় লোকের সংখ্যা বেশি বড় মানুষ কম/ বড় মাপের মানুষগুলো বাসি আলুর দম/ এমন ধারা চলতে দিলে/ গিলবে এ দেশ যে হাড়গিলে/ তার থাবাকেই মানতে হবে সভ্য লোকের যম।’ আমরা যে একটা ফাঁপা ও বাগাম্বড়ের সময়ে বাস করছি এ তার কাব্যিক নিদর্শন। একদিকে বাড়ছে বিত্তবানদের সংখ্যা অন্যদিকে কমছে বড় মানুষ অর্থাৎ মহৎ ও মহান মানুষের সংখ্যা।

বড় মাপের মানুষ বলে যারা সমাজে সমাসীন তারা ‘আদতে বাসি আলুর দম’। অর্থাৎ তাদের দিয়ে আর কাজ চলে না। তারা সেকেলে হয়ে পড়েছেন। এই যদি অবস্থা চলতে থাকে তো হাড়গিলে পাখি এসে আমাদের সমস্ত গিলে খাবে। আর কিছু বাকি থাকবে না। অথবা তার আরেকটি কবিতায় বিষয়টি আরও সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে, ‘ষাট বছরের বুড়ি দাদি নাম ধরেছে মিস/ ডোবার পাড়ের চিলতে জমির নাম দিয়েছে বিচ/ যোগ্য কিছুই যায় না পাওয়া/ বদলে গেছে যুগের হাওয়া/ ড্রইং রুমের বইগুলো সব ডেকোরেশন পিস।’ এই কবিতা সহজেই বোধগম্য। আমাদের অন্তসারশূন্যতাকে তুলে ধরে নির্মম অথচ সরসভাবে।

নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র কবিতায় যেসব রূপকের ব্যবহার হয়েছে তা আমাদের অঞ্চলেরই। তার কবিতাগুলো পড়তে পড়তে বাংলার মৌখিক সাহিত্যের যে একটি ধারা ছিল বা এখনও আছে তা মনে পড়ে যায়। বচন, উক্তি, ধাঁধার সঙ্গে তার কবিতাগুলোর গন্ধ মিলে যায়। ‘আবহমান বাংলার’ একটা রূপ তিনি কবিতায় এঁকেছেন। কিন্তু তা আধুনিক হয়ে উঠেছে বিষয়বস্তুর কারণে। সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলীকে তিনি আত্মস্থ করেছেন। তারপর তা নিজের ভঙ্গিতে, কটাক্ষ ও রসিকতায় উপস্থাপন করেছেন।

আমাদের সময়ের বুদ্ধিবৃত্তিক অথবা রাজনৈতিক যে ‘বালখিল্যতা’ চলছে তাও তার কবিতায় আছে। ‘সিরিয়াস কথা নেই সবই বালখিল্য/ শ্রোতা আর বক্তা যে একজোটে মিললো/ এ ধারার শেষ নেই/ দেশ আর দেশ নেই/ বিপরীত কথা বলে পাই তাচ্ছিল্য।’ অর্থাৎ শ্রোতা আর বক্তার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা বিতর্ক থাকার কথা তা নাই। ‘হাততালির’ সমাজে আমরা বাস করছি এখন। শুধুই তোয়াজ, অন্যকে স্তুতি বাক্যে ভাসিয়ে দেওয়ার রীতি। যদি এর ব্যতিক্রম হয়, কেউ তর্ক করে বা বিরোধিতা করে তাহলে তাকে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। কবি ইশারায় এই তাচ্ছিল্য বলতে কী বুঝিয়েছেন তা বাস্তবতার নিরিখে পাঠক উপলব্ধি করতে পারবেন নিশ্চয়।

নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র পাঁচশ একটি কবিতা পাঠককে আনন্দ দেবে। প্রাচীন ধারার রস আস্বাদনের সুযাগ দেবে। চিরায়ত বাণী নতুন করে হয়ত কেউ কেউ পাঠ করবেন অনেকদিন পর। জীবন ও সমাজের বিষয়ে গভীর এক প্রজ্ঞা এই কবির রয়েছে। তিনি ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপের ছলে হাজির করেছেন কঠোর ও করুণ বাস্তবতা। পড়তে যত আনন্দ পাওয়া যাবে গভীর উপলব্ধি তত ভাবিয়ে তুলবে। অনেক দিন পর বাংলা সাহিত্যে রসের মজাও পাওয়া যাবে।

তিনি নিজেই লিখেচেন, ‘রস ছড়িয়ে করতে হবে পাঠক বশ/ তাই না হলে মিলবে কি আর কবির যশ/ অন্তমিলের ছত্র পাঁচে/ যেই কবিতায় জীবন বাঁচে/ তা-ই লিমেরিক; এর প্রাণে রয় হাস্যরস।’ তবে তিনি ছন্দেরও একজন যাদুকর। যেভাবে প্রতিটি কবিতায় ছন্দ মিলিয়েছেন তা পাঠককে বিনোদিতই শুধু করে না আচ্ছন্নও করে।

তিনি কবিতায় দাবি তুলেছেন পরিবেশ সুরক্ষারও। মানুষের সঙ্গে পরিবেশের যে নিবিড় সম্পর্ক সেই দার্শনিক উপলব্ধি তিনি পাঠকের জন্য হাজির করেছেন কবিতা আকারে। ‘হাকালুকি মুখী হলে হতো সুখি ছিলো যত পথচারী/ বড়ো বড়ো মাছ রুই বোয়ালের লেজ ছিল নাড়ানাড়ি/ জাল ফেলে মাছ ধরত যে জেলে/ ডুব সাঁতারের কতো খেলা খেলে/ এখন সে বিশাল হাওরের বুকে চলে মহিষের গাড়ি।’ প্রকৃতির এক বিষাদ বিবরণ পাঠক এখানে পাবেন। জল থৈ থৈ হাওরের বুক হয়ে গেল ধু ধু বালুর ভূমি। বালকের স্বপ্নও গেল হারিয়ে। মানুষ যেন হয়ে পড়ল শুষ্ক ও বান্ধবহীন। তাদের জীবন ধারণ কষ্টের হয়ে গেল। নৌকার বদলে এল মহিষ। অর্থনীতিও এই কবি ভালো বোঝে বলে দেখা গেল তিনি জানেন কীভাবে কী হয় এদেশে। সর্বত্র কবি ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়ার বিচরণ।

তিনি লিখেছেন, ‘সরকারি লোক বিধান-বিধির আজগুবি সব শর্তে/ সরল লোকের পকেট মারে ফেলেই বিধির গর্তে/ আকাশটাতে যতো তারা/ আইনের আছে ততো ধারা/ অফিস পাড়ায় মানুষ কি যায় তাদের পকেট ভরতে?’। আমাদের এখানে দুর্নীতি যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, কিছু মানুষ বিভিন্ন সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণ নাগরিকদের যে হয়রানি করছে, নিজেদের পকেটট ভারি করছে তার চিত্র এই কবিতায় পাওয়া যায়।

কবি নেয়ামত উল্যা একজন অনুভূতিপ্রবণ মানুষ। তিনি একজন সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিও বটে। তার কবিতায় আমরা মানুষের ঠকে যাওয়ার যে ইতিহাস তা লিপিবদ্ধ দেখি। ইতিহাসে কবির দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। ভবিষ্যৎ নিশ্চয় তাকে এসব কারণে মনে রাখবে। যত দিন যাবে তার কবিতা তত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে। তত তিনি একটি জাতির মর্যাদাসম্পন্ন হয়ে ওঠার পথপ্রদর্শক হবেন।

প্রেম নিয়েও তার কবিতা আছে। কবি লিখেছেন, ‘রোজ বিকেলে আমার সাথে পার্কে যখন যাও/ মুখ না দেখে বুক দেখে হায় কী সুখ তুমি পাও/ এর মানে কী পাই না ভেবে/ ভাবি বুকে বুক জড়াবে/ বুঝি শেষে, বুকপকেটের টাকার দিকেই চাও।’ প্রেম যে এখন স্বার্থের আর অর্থের প্রেম হয়ে গেছে তা আমরা অনেকেই মনে মনে উপলব্ধি করি। কিন্তু তা কয়জন মুখে স্বীকার করে। কয়জন কবি আছেন প্রেমকে ভালোলাগার, রোমান্টিকতার খোলস থেকে বের করে প্রকৃত বাস্তবতা উন্মোচন করেন। পঞ্চপর্ণ যারা পড়বেন তারা বুঝবেন এই কবি কোন দলে আছেন।

তিনি সরাসরি মানুষের দলে। জনবান্ধব কবি ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। রাজনীতিকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেন। যারা আজ জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকার কথা বলেন, তাদের বুজরুকিও তিনি ধরিয়ে দেন। নির্মম সত্য কথা তিনি সহজভাবেই বলেন। ‘ভোটার কি আর তেমন দামি প্রার্থী হওয়াই মূল কথা/ প্রার্থী হবার শর্ত অনেক অর্থ-বিত্ত যোগ্যতা/ ভোটার তো হয় যে-সেই লোকে/ স্লোগান তুলে মুখে মুখে/ ভোটাররা কি আনতে পারে নব্যযুগের সভ্যতা?’ এই কবিতা খুব রাজনৈতিক। ভোটার হওয়া আর প্রার্থী হওয়ার রাজনৈতিক যোগ্যতার প্রশ্ন যেমনি আছে, তেমনি ভোটারদের হেয় করার মানসিকতাও আছে। প্রার্থী হয়ে ভোটারদের ওপর চড়ে বসার মানসিকতাকে কবি কটাক্ষ করেছেন।

তাই কবি ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া আমাদের সময়ের গণতন্ত্রের কবি, জনতন্ত্রের কবি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট