বাংলাদেশ ফুটবল দল বছরে কয়েকটি ম্যাচ খেলে। প্রতি ম্যাচের আগে কিংবা বিদেশ সফরের আগে সংবাদ সম্মেলন করে ফেডারেশন। অন্যবারের চেয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলন বেশ ভিন্ন ছিল। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে খেলবেন ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা হামজা চৌধুরি। হামজা ছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের ছিল উপচে পড়া ভিড়।
কোচ ও অধিনায়কের পর হামজা সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন। প্রশ্নোত্তর পর্বেও তিনি বলেছেন সবার শেষে। আজকের আগ্রহের কেন্দ্রেই ছিলেন হামজা। ভারত ম্যাচ নিয়ে মূলত সংবাদ সম্মেলন হলেও হামজার ক্যারিয়ার, বাংলাদেশের সম্ভাবনা, পরিবারের সহায়তা সব বিষয়েই প্রশ্ন হয়েছে। ইংরেজির পাশাপাশি সিলেটি ভাষাতেও উত্তর দিয়েছেন হামজা। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অত্যন্ত শান্ত, মৃদু স্বর এবং হাসিমুখে।
হামজা চৌধুরি যখন লেস্টার সিটিতে খেলা শুরু করেন, তখন ইংল্যান্ড ফুটবলে লেস্টার তেমন আলোচিত দল ছিল না। পরবর্তীতে দলটি এফএ কাপ জিতেছে। বাংলাদেশ ফুটবল দলেও যখন হামজা খেলতে আসলেন তখন র্যাঙ্কিং ১৮০’র পরে। লেস্টারের সঙ্গে বাংলাদেশের এই বিষয়ে খানিকটা সাদৃশ্য আছে কি না এই বিষয়ে হামজার মতামত চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা অনেকটা সে রকমই। অবশ্যই আমি আমার অভিজ্ঞতা এবং গল্প ভাগাভাগি করব। যেটা বলছিলাম, লেস্টারের গল্প অন্যরকম গল্প।’
লেস্টারের মতোই গল্প লিখতে বাংলাদেশের হয়ে অনেক বছর খেলতে চান হামজা। তিনি বলেন, ‘একটা জাতি হিসেবে আমরাও দারুণ, আমাদেরও সম্ভাবনা আছে, আমরাও কিছু অর্জন করতে পারি। এজন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করতে হবে। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। ইনশা-আল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে অনেক বছর খেলব আমি।’
হামজা বাংলাদেশে আসার পর থেকেই সব মহলে বেশ উন্মাদনা। তার ওপর সেই প্রত্যাশার চাপও রয়েছে। গোলের খেলা ফুটবলে যেকোনো ফলাফলই হতে পারে। ভারত ম্যাচের ফল নেতিবাচক হলে সেই চাপও পড়তে পারে হামজার ওপর। এমন প্রশ্নও হয়েছে আজকের সম্মেলনে। এ নিয়ে হামজা বলেন, ‘দিন শেষে আমরা ফুটবল খেলি। ফুটবলে যেকোনো কিছুই হতে পারে। এখানে কোচ দলকে প্রস্তুত করছে। আমি এখানে এসে সবার ভালোবাসা পাচ্ছি। আমি দলকে সহযোগিতা করতে চাই এবং সেটা যতটা সম্ভব ততটা।’
গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের মনোযোগ হামজার ওপরেই। ফুটবল দলীয় খেলা। আজ ভারত-মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলছে। হামজাকে ঘিরেই বাংলাদেশের ভারতবধের মূল পরিকল্পনা। অথচ হামজা ঢাকায় আসার পর নেই কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ। মাত্র পাঁচটি অনুশীলন সেশন করে হামজাকে ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে শিলংয়ে নামতে হবে। প্রস্তুতি ম্যাচ ও দলীয় কম্বিনেশন নিয়ে এই মিডফিল্ডার বলেন, ‘এটা বাফুফে ভালো বলতে পারবেন। কোন সিদ্ধান্তটা দলের জন্য ভালো।’
হামজা ইংল্যান্ডে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোচের অধীনে খেলেন। বাংলাদেশ বিশ্ব ফুটবলেরই র্যাঙ্কিংয়ে যেমন পিছিয়ে, তেমনি কোচের ক্ষেত্রেও। এরপরও স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার ওপর আস্থা রেখেছেন তিনি, ‘কোচের ট্যাকটিকস নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তারা কী করছেন এবং তাদের পরিকল্পনা কী সেগুলো বলেছেন। আমি এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই দলটাকে সাহায্য করতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনের একেবারে শেষ প্রশ্ন সিলেটি ভাষায় করেন সাংবাদিক। হামজা সিলেটি ভাষায় উত্তরে বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ আইয়া আমাকে ওয়েলকাম করতাছে। অনেক ভালো লাগছে।’