1. numanashulianews@gmail.com : kazi sarmin islam : kazi sarmin islam
  2. admin@newstvbangla.com : newstvbangla : Md Didar
ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি ও শক্তি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য "দিদারুল ইসলাম" - NEWSTVBANGLA
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাকা পপির নতুন গান – মিল্টন খন্দকারের সুরে -“সব কথা হবে না বলা” খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশে মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবে : শেখ হাসিনা তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ—ছুঁয়েছে ৪০ ডিগ্রির পারদ মান্দায় শিক্ষা অফিসের সামনে থেকে মোটরসাইকেলটি চুরি  তীব্র তাবদাহে নওগাঁয় বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী তীব্র গরমের মধ্যে স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়। মদ পান করে কয়েকজন নারী মিলে অন্য আরেক নারীকে মারধরের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি অধ্যক্ষ ড. আমজাদ হোসেনের বেতন বন্ধ করেছে শিক্ষা অধিদপ্তর ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার অধীর অপেক্ষায় আজও প্রহর গুনছেন পরিবার-নেতাকর্মীরা মুজিবনগর দিবস টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢল

ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি ও শক্তি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য “দিদারুল ইসলাম”

প্রতিনিধি

 দিদারুল ইসলাম বলেন আবারো তীব্র তাপপ্রবাহের মুখোমুখি বাংলাদেশের মানুষ। আর এর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলছে ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’ নিয়ে আলোচনাএটা কেমন ঘূর্ণিঝড় হবে? কবে, কোথায় এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে? ঘণ্টায় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ কত হবে? ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কতটা?- এরকম নানান প্রশ্ন এখন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় লঘূচাপ সৃষ্টি এবং এটি ঘণীভূত হবার সম্ভাবনার তথ্য দিলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ঘূর্ণিঝড়ের কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি।

অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো: ওমর ফারুক বলেন ‘লঘুচাপটি মঙ্গলবারের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে ও ১১ তারিখের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। কিন্তু এখনো বলা যাচ্ছে না। আরো ডেভেলপমেন্ট দেখে আমরা বলতে পারবো।’

অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর ইতোমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত সতর্কবার্তা দেয়া শুরু করে দিয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী

, লঘুচাপটি শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং সেটি উত্তর দিক বরাবর অগ্রসর হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে যাবে। এই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ বা মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর।

তবে এই ঘূর্ণিঝড়টি কতটা শক্তিশালী হবে বা কতটা শক্তি নিয়ে কোথায় আঘাত হানবে তা নিয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলছেন না আবহাওয়াবিদরা। মে মাসে তৈরি হওয়া অতীত ঘূর্ণিঝড়গুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে ঘূর্ণিঝড় বেশ শক্তিশালী হওয়াটাই স্বাভাবিক।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘এটা এখনো অনেক দূরে, দূরের থেকে যে কোনো দিকে টার্ন নিতে পারে। কিন্তু মডেল যেহেতু দেখাচ্ছে বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হবে, এদিকে আসার সম্ভাবনাই বেশি।’

বাংলাদেশে যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে তার বেশ কিছু ছিল মে মাসে। সেসব ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা আছে।
ড. কর্মকার আরো বলেন, ‘এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় হলে বাতাসের তীব্র গতিবেগ থাকে, আমাদের নজর রাখতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।’

অন্যদিকে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলছেন, দুটি আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে তিনি দেখেছেন ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনাই বেশি এবং ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান নিয়ে উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।

কবে আঘাত হানতে পারে?
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লঘুচাপটি নিম্নচাপে রূপ নিয়ে এগুতে থাকলে আস্তে আস্তে শক্তি সঞ্চয় করার সুযোগ থাকে। এখন যেই লঘুচাপটি তৈরি হয়েছে তা মঙ্গলবার (৯ই মের) মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ১০ই মে সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মে মাসের ১১ তারিখে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি প্রাথমিকভাবে ১১ই মে উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে এরপর ধীরে ধীরে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন মডেলও নির্দেশ করছে যে ঘূর্ণিঝড়টি ১২ই মে উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের দিয়ে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ১২ তারিখে এটি সর্বোচ্চ শক্তিতে থাকবে এবং আমেরিকান মডেল অনুযায়ী ১৩ তারিখের দিন শেষে বা ১৪ই মে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

মোখা’র সম্ভাব্য শক্তি
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের দুটি মৌসুম রয়েছে। একটি বর্ষার আগে অর্থাৎ এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসে এবং আরেকটি বর্ষার পড়ে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে।

সমরেন্দ্র সরকার বলছেন, ‘এই দু’টা সময়ে সি সার্ফেসের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। বায়ুমণ্ডলের বিন্যাস এই সময়ে ফেভারেবল থাকে। সূর্য যখন এক গোলার্ধ থেকে যখন আরেক গোলার্ধে যায় তখন এই সময়টায় বঙ্গোপসাগরের ওপরে থাকে। ফলে বঙ্গোপসাগর অতি উত্তপ্ত হয়ে যায়।’

এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে যে পানিটা আছে সেটা সুপ্ত তাপ নিয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এটা বায়ুমণ্ডলে যত প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড় তত শক্তিশালী হয় এবং এ কারণে এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় বেশি শক্তিশালী হয় বলে উল্লেখ করেন ড. কর্মকার।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে মধ্য ও উত্তর বঙ্গোপাসগরে কোনো নিম্নচাপ লঘুচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। চলতি বছরে সর্বপ্রথম এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সে কারণে পুরো মৌসুমটায় সূর্য থেকে আগত রশ্মি পুরোটাই বঙ্গোপসাগরের পানি উত্তপ্ত করেছে, ফলে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের পানিতে।

আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে মোস্তফা কামাল পলাশ জানাচ্ছেন, এখন যেই স্থানে লঘুচাপটি অবস্থান করছে সেখানকার পানির তাপমাত্রা এখন ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

গত কয়েক বছর ধরে যেই কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়টি সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার পানির মধ্যে। এবং এখন বঙ্গোপসাগরের সমদ্রের পানির তাপমাত্রার যে মানচিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে, যত উত্তর দিকে ঘূর্ণিঝড়টি অগ্রসর হবে তত বেশি এটি উত্তপ্ত পানির সংস্পর্শে আসবে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি ধরে রাখার জন্য যে তিনটি প্রধান শর্ত প্রয়োজন তার তিনটিই আছে এবারের ঘূর্ণিঝড়ে। সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রির উপরে এবং সমুদ্রে সঞ্চিত শক্তিযথেষ্ট পরিমাণে আছে। ফলে ঘূর্ণিঝড়টি আকারে বড় হবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত করার সময় এটি অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় কিংবা তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

পলাশ জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রে থাকা অবস্থায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ওঠার আশঙ্কা রয়েছে ১৬০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার। এবং উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ওঠার আশঙ্কা রয়েছে ১৩০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার।

তার মতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা ও নোয়াখালী এই চারটি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়টি হবার আগে সাগর ও আবহাওয়ার যেই পরিস্থিতি ছিল এই বছরেও সে রকম পরিস্থিতি মডেলে দেখা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মোস্তফা কামাল পলাশ।

কী ব্যবস্থা নেয়া উচিত?
এই সময়টায় উপকূলীয় এলাকার জেলেদের সতর্ক করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, উপকূলীয় এলাকার কোনো জেলে ছোট নৌকা নিয়ে মঙ্গলবারের পরে মাছ ধরার উদ্দেশে গভীর বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে যাত্রা করলে প্রাণ নিয়ে উপকূলে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

পলাশ বলছেন ‘প্রত্যেক ঘূর্ণিঝড়ের পরে দেখা যায় ট্রলারডুবির খবর। সামগ্রিকভাবে সকলের জন্য পূর্বাভাস দেয়া হয়।

কিন্তু এই পূর্বাভাস ভিন্ন ভিন্ন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মোস্তফা কামাল পলাশ।

তিনি বলেন, ‘স্টেকহোল্ডারদের জন্য এটা করতে হবে। এখন হাতে মাত্র চার থেকে পাঁচ দিন সময় আছে। উপকূল থেকে কোনো জেলে যদি গভীর সমুদ্রে যায় তাহলে তার যেতে দু’দিন আসতে দু’দিন লাগে। এখনই যদি আপনি তাদের সতর্ক না করেন তাহলেতো তারা ঝরের মধ্যেই পড়ে যাবে। জেলেদের নিরাপত্তার কথা কই ভাবলাম আমরা?’

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর ইতোমধ্যে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপের চারপাশে জেলেদের মাছ ধরা ও চলাচল না করার জন্য সতর্কতা জারি করেছে। সেই উদাহরণ টেনে পলাশ বলছেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষের সম্পদ যেন নষ্ট না হয় সেদিক বিবেচনায় আগে থেকে সরকারের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।

‘ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাথায় রেখে উপকুলীয় এলাকার দুর্বল বাঁধগুলো ঠিক করা উচিত। এখনো কোনো সতর্কতা জারি হয়নি, যে বেড়িবাঁধগুলো দুর্বল সেগুলো এই চার থেকে পাঁচ দিনে ঠিক করা সম্ভব নয়।’

ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি কমানো গেলেও কৃষক, চিংড়ি চাষী, লবণ চাষীদের সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সময়ের মধ্যে কতটা নেয়া সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সমরেন্দ্র কর্মকার বলছেন, কৃষকদের ও অন্য চাষীদের যদি এর মধ্যেই সতর্ক না করা হয় তাহলে কৃষি জমি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় যেভাবে সৃষ্টি হয়
সমুদ্রের কোনো স্থানে সাগরে বাতাসের চাপ কমে গেলে সেখানে লঘুচাপ তৈরি হয়। এই প্রবণতা আরো বেড়ে গেলে এক সময় নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।

আবহাওয়াবিদদের মতে, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে অবতল আকৃতির অগভীর বা উপসাগরে। মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাস যখন এ রকম জায়গায় সাগরের পানিকে ঠেলতে থাকে, তখন ফানেল বা চোঙার মধ্যে তরল পদার্থ যে আচরণ করে, এখানেও তাই ঘটে। সাগরের ফুঁসে ওঠা পানি চোঙা বরাবর ছুটতে থাকে।

আবহাওয়াবিদ ও ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ডের একজন লেখক বব হেনসনের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘এ রকম ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের টেক্সটবুক উদাহরণ হচ্ছে বঙ্গোপসাগর’।

তবে বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত হয় আরো বাড়তি কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন সমুদ্রের উপরিতল বা সারফেসের তাপমাত্রা। এটি পরিস্থিতিকে আরো বিপদজনক করে তোলে, বলছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ২৬.৫ বা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে ঘূর্ণিঝড়ের পরিবেশ তৈরি হয়।

যদি কোনো নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে আঞ্চলিক ঝড় বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল) গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।

যাত্রাপথ কম হলে ঝড়ের শক্তি বাড়ে কিন্তু যাত্রাপথ দীর্ঘ হলে এর শক্তি কিছুটা ক্ষয় হতে পারে। এছাড়া সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা ঝড়ের শক্তিসঞ্চয়ের অনুকূল না হলে স্থলভাগে পৌঁছানোর আগেই ঝড়ের গতি কমে যেতে পারে।

১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড়
১৯৯১ সালের ২৯-৩০ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়কে আখ্যা দেয়া হয় ‘শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে যাতে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায় বলে জানা যায়।

যদিও বেসরকারি সংগঠনের দাবি অনেক মাছধরার ট্রলার সাগরে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন আরো অনেকে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এক কোটি মানুষ।

১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার।

আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস দেয়া হলেও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। ছয়ঘণ্টা ধরে স্থলভাগে তাণ্ডব চালায় এই ঘূর্ণিঝড়টি।

বঙ্গোপসাগরে এখন যে শক্তি নিয়ে লঘুচাপটি অবস্থান করছে সেই শক্তি নিয়েই এটা যদি অগ্রসর হয় তাহলে সেটা নব্বইয়ের দশকের ঘূর্ণিঝড়ের মতোই প্রবল হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মে মাসের ঘূর্ণিঝড়
মে মাসে বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের।

ঘূর্ণিঝড় আইলা: ২০০৯ সালের ২৫শে মে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইলা, যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

মহাসেন : ২০১৩ সালের ১৬ই মে নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’

রোয়ানু : ২০১৬ সালের ২১শে মে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে ৪-৫ ফুট উচ্চতার ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’

মোরা : ২০১৭ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোর‘।

২৪-২৫ মে ১৯৮৫ : তীব্র ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং উপকূলীয় অঞ্চলে (সন্দ্বীপ হাতিয়া ও উড়ির চর) আঘাত হানে। চট্টগ্রামে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৪ কিমি, সন্দ্বীপে ১৪০ কিমি, কক্সবাজারে ১০০ কিমি এবং ঝড়ের কারণে জোয়ারের উচ্চতা ৩.০-৪.৬ মিটার ছিল।

ফণী : ২০১৯ সালের মে মাসে (২রা মে) ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের দিকে আঘাত হাত হানে। উপকূলে আঘাত হানার আগে পর্যন্ত ফণী এর তীব্রতা বজায় রেখে চলে, উপকূলে আঘাত হানার পর ফণীর তীব্রতা দ্রুত কমতে থাকে। পরদিন, ফণী দুর্বল হয়ে ক্রান্তীয় ঝড় হিসেবে কলকাতা ও পরে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায়।

আম্পান : ২০২০ সালের ২০শে মে সুপার সাইক্লোন আম্পান বাংলাদেশে আঘাত হানে।

ইয়াস : ২০২১ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানে।

আসানি : ২০২২ সালের মে মাসে আঘাত হানে, তবে অন্ধ্রপ্রদেশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। বাংলাদেশে সেই তুলনায় কম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় নার্গিস উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া একটি ঘূর্ণিঝড়, যা ২০০৮ সালের মে ৩ তারিখে বার্মার উপকূলে আঘাত হানে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট