গাইবান্ধার সাংবাদিকতা ও সাহিত্য অঙ্গনের অন্যতম অভিভাবক, প্রবীণ সাংবাদিক মশিয়ার রহমান খান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার (১৯ মার্চ) ভোরে ঢাকার রামপুরায় তার ছেলে ডা. ইশতিয়াক খান নির্ঝরের বাসায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
মশিয়ার রহমান খান শুধু একজন সাংবাদিক ছিলেন না, বরং একজন সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকও। সাপ্তাহিক গাইবান্ধা ও দৈনিক সন্ধান পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রকাশক হিসেবে তিনি স্থানীয় সংবাদ জগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক ইত্তেফাকের গাইবান্ধা প্রতিনিধি হিসেবেও দীর্ঘসময় কাজ করেছেন তিনি।
সাংস্কৃতিক চর্চায়ও তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। সাতভাই চম্পা শিশু সংগঠন ও গাইবান্ধা সাহিত্য পরিষদ-এর প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক হিসেবে তার নাম গাইবান্ধার সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার লেখা ‘ছন্দের আলপনা’ ছড়া সংকলনে তার সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়।
মশিয়ার রহমান খান সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৭২ সালে, বাংলাদেশ প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (বিপিআই)-এর গাইবান্ধা সংবাদদাতা হিসেবে। এরপর দৈনিক বাংলার বাণী-তে কাজ করেন এবং ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দৈনিক ইত্তেফাকের গাইবান্ধা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিক সংগঠনেও তিনি রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে প্রেসক্লাবের একাংশের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) অ্যাওয়ার্ড-২০২১-সহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। তার সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত হয়েছে।
১৯৫০ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মশিয়ার রহমান খান। তার বাবা হেমায়েত হোসেন খান ও মা মজিদা খানম। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী তাজিনা আকতার রাকা ও একমাত্র ছেলে ডা. ইশতিয়াক খান নির্ঝরসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে গাইবান্ধার সাংবাদিক সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বুধবার এশার নামাজের পর গাইবান্ধা পৌর কবরস্থান জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে। সাংবাদিকতা ও সাহিত্য জগতে তার অবদান গাইবান্ধার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।