আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা): আবু হুরায়রা ওরফে খালিদ (২৫)। গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) বলে। বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, দলীয় লোকজনদের পদ দেওয়াসহ নানা লোভ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে করতেন অর্থ লেনদেন। এমন অভিনব প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবীব খান। এর আগে, মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে রংপুর শহরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আবু হুরায়রা ওরফে খালিদ (২৫) নাটোর জেলার সিংড়া থানার বালুয়া গ্রামের জিয়াদুল ইসলামের ছেলে। এর আগে সোমবার সাভার মডেল থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এক ব্যক্তি। সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবীব খান বলেন, আবু হুরায়রা ওরফে খালিদের প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রংপুর সদরের কতোয়ালি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। খালিদ পেশায় বাংলাদেশ বেতারের একজন রেডিও টেকনিশিয়ান ছিলেন। প্রতারণার অভিযোগে তাকে চাকরি হারাতে হয়। এরপর রংপুর মহানগরীতে চলে যান। সেখানে গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী, দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ফোন দিতেন।
মোবাশশিরা হাবীব বলেন, ভুয়া এপিএস পরিচয় দেওয়া খালিদ ফোন দিয়ে তাদের বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করতেন। এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিকাশে সর্বশেষ ছয় লাখ টাকার লেনদেন পাওয়া যায়। প্রতারণার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো এ ধরনের কিছু পাওয়া যায়নি। ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত আছে কি না সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে একজন রেডিও টেকনিশিয়ান। কিন্তু সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার এপিএস পরিচয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এমপি মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে ডিবির এএসপি মোবাশশিরা হাবিব খানের নেতৃত্বে রংপুরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম।
উল্লেখ্য, এসএম কামাল হোসেন রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।