মিউনিখে দুই দেশের ফুটবল যুদ্ধের আগে আবহটা বেশ উত্তপ্ত। ইউরোর শ্রেষ্ঠত্বের সেমিফাইনালের লড়াই। স্পেনের কাছে নিছক একটা ম্যাচ নয়, প্রতিশোধেরও। চার দশক আগের সেই স্মৃতি বারবারই ফিরে আসছে স্পেন শিবিরে। সেবার ইউরো ফাইনালে দুই গোলে হারতে হয়েছিল এই ফ্রান্সের কাছেই। অবশ্য শুধু সেবারই নয়। আরও একটা ফাইনালে স্প্যানিশদের বিধ্বস্ত করেছিল ফরাসিরা। নেশন্স কাপ ফাইনালে সেবার গুনে গুনে তিন গোল দিয়েছিলেন করিম বেঞ্জেমারা।
এবার অবশ্য পরিস্থিতি পুরো আলাদা। ইউরোতে দুরন্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে স্পেন। দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন ওলমো, মোরাতারা। অন্যদিকে, ফ্রান্স এখনও পর্যন্ত চেনা ছন্দে নেই। এখনও পর্যন্ত ‘ওপেন প্লে গোল’ করতে পারেনি ফ্রান্স। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে টেনশনের স্রোত বইয়ে জিতেছে দেশমের দল।
দলের সবচেয়ে বড় ভরসা কিলিয়ন এমবাপেও নিষ্প্রভ। নাকের চোট ভালোভাবে জেঁকে বসেছে তার ওপর। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় মিউনিখে স্পেন অবশ্যই ফেভারিট থাকবে। কিন্তু তাতেও স্বস্তি কোথায়! বরং ম্যাচের আগের দিন স্পেন অধিনায়ক আলভারো মোরাতা যেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সেটা স্পেন সমর্থকদের উষ্মা বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ইউরোর পর রীতিমতো দেশ ছাড়ার হুঙ্কার দিয়ে গেলেন মোরাতা। বলে দিলেন, দেশ তাকে এতটুকু সম্মান দেয় না।
ঘটনার সূত্রপাত কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানি ম্যাচে। স্পেন মিডিয়ার একটা অংশ মোরাতাকে নিয়ে ভুলভাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। বলা হয়, হলুদ কার্ড দেখার জন্য সেমিফাইনালে খেলতে পারবেন না তিনি। এমনকী সাইডলাইনে মোরাতাকে কাঁদতে দেখে বলাবলি হয়, দলের জন্য তিনি একটুও চিন্তিত নন। মোরাতা কাঁদছেন নিজের জন্য। যা শোনার পর ফেটে পড়েন মোরাতা। এমনিতেই তিনি অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ছাড়বেন বলে একপ্রকার ঠিক করেই ফেলেছেন। বলে দিয়েছেন, স্পেনে তার ওপর র্যাগিং চলে।
সেমিফাইনাল যুদ্ধের আগে আরও বিস্ফোরক মোরাতা। সাফ সাফ বলে দিলেন, ‘লোকরা বলছিল আমি হলুদ কার্ড দেখেছি বলে কাঁদছিলাম। আমি কাঁদছিলাম আমি দেশের জন্য। আমি দলের অধিনায়ক। দেশের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়াই আমার লক্ষ্য থাকে। আর ভাবুন এর জন্য আমার সমালোচনা চলছে। আমি সর্বস্ব দিয়ে ইউরো জেতার চেষ্টা করব। এটাই দেশের হয়ে সম্ভবত আমার শেষ টুর্নামেন্ট হতে চলেছে। স্পেনের হয়ে খেলাটা আমার জন্য কখনোই সহজ ছিল না। সবসময় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বাড়ি থেকে বেরোলেই সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। আমার পাঁচ বছরের বাচ্চাও বুঝতে পারে না, কেন তার বাবার বিরুদ্ধে সবসময় এরকম ব্যবহার করা হয়। স্পেনে আমার জন্য কোনো সম্মান নেই। এর থেকে অনেক সহজ হল অন্য কোনও দেশের হয়ে খেলা।’
ইউরো সেমিফাইনালের আগে অধিনায়কের এমন আক্ষেপ দলের খেলার মধ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে বলেই ফুটবলমহল মনে করছে।
অবশ্য স্বস্তি ফ্রান্সেও বা কোথায়! ফ্রান্সের পুরো টিমও নিজ দেশের মিডিয়ার ওপর চরম ক্ষিপ্ত। প্র্যাকটিসে পেনাল্টি শুট আউট প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন কোচ দিদিয়ের দেশম। আর তাদের দেশেরই এক মিডিয়া প্র্যাকটিসের পুরো ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়।