1. numanashulianews@gmail.com : kazi sarmin islam : kazi sarmin islam
  2. islamkazisarmin@gmail.com : newstv : Md newstv
  3. admin@newstvbangla.com : newstvbangla : Md Didar
৫০ বছর আগে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল সৌদি বাদশাহ ফয়সালকে - NEWSTVBANGLA
বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন

৫০ বছর আগে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল সৌদি বাদশাহ ফয়সালকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

‘‘আমি সেদিনের কথা কখনও ভুলতে পারব না। এখনও বাবার মুখে দেখা কষ্টের ওই মুহূর্তটা আমি অনুভব করতে পারি,’’ এভাবেই জানিয়েছেন ড. মেই ইয়েমেনি। তিনি সৌদি বাদশাহ ফয়সালের পেট্রোলিয়াম বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ জাকি ইয়েমেনির মেয়ে।

ড. ইয়েমেনি ২০১৭ সালে বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘‘আমি আমার বাবার মুখে যে দুঃখ ও যন্ত্রণা দেখেছি, তা অনুভবও করেছি। আমার বাবা তার প্রিয় বন্ধু ও শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যখন তাকে (সৌদি বাদশাহ ফয়াসল বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ) গুলি করা হয়।’’

দিনটা ছিল, ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ। ঈদে মিলাদুন্নবী ছিল সেদিন। জনগণের সাথে সাক্ষাৎ করছিলেন সৌদি আরবের শাসক বাদশাহ ফয়সাল। কুয়েতের এক প্রতিনিধিদলও তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিল।সৌদি বাদশাহর ভাইয়ের ছেলে ফয়সাল বিন মুসাইদও কুয়েতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত ছিলেন। এরই মাঝে বাদশাহ ফয়সাল তার ভাতিজা ফয়সাল বিন মুসাইদকে অভ্যর্থনার জন্য এগিয়ে যান। যখন রীতি মেনে ভাইপোকে চুম্বনের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানাতে যাবেন, ঠিক তখনই ঘটনাটি ঘটে।

নিজের পকেট থেকে হঠাৎ বন্দুক বের করেন তার ভাতিজা, বাদশাহ ফয়সালকে লক্ষ্য করে তিনবার গুলি চালান তিনি। ঘটনার সময় ড. মেই ইয়েমেনির বাবা, আহমেদ জাকি ইয়েমেনি বাদশাহ ফয়সালের কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন। কুয়েতের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাদশাহকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি।

গুলিবিদ্ধ বাদশাহকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও গভীর ক্ষত এবং অতিরিক্ত রক্তপাতের জন্য তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। যেখানে বাদশাহ ফয়সালের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল, সেখান থেকে কয়েক মাইল দূরেই ছিলেন ড. মেই ইয়েমেনি। বাবার অ্যাপার্টমেন্টে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি, তার বয়স তখন ১৮ বছর।

স্মৃতির পাতা উল্টে তিনি বলেছেন, ‘‘বাবার অ্যাপার্টমেন্টে বইয়ে ঠাঁসা যে ঘরটা, সেখানে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমি। তিনি ফিরে আসেন। তার চোখে মুখে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ ছিল। আমার সঙ্গে দেখা না করেই অন্য একটা ঘরে চলে যান তিনি।’’‘‘তার পিছুপিছু সেই ঘরে ঢোকার কথা ভাবছিলাম। সেই সময় হঠাৎই ভীষণ জোরে তার চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পাই। এমনটা এর আগে কখনো হয়নি।’’

ড. ইয়েমেনি জানিয়েছেন, ঘটনার পর যখন বাদশাহ ফয়সালকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার সঙ্গে বাবা আহমেদ জাকি ইয়েমেনিও ছিলেন। তিনি বলেন, যখন বাদশাহ ফয়সাল গুলিবিদ্ধ হন, তখন আমার বাবাও তার সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন এবং সমস্ত বিষয় তদারকি করেছিলেন। আমার বাবা বাদশাহ ফয়সালের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিলেন।

বাদশাহর মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ড. মেই ইয়েমেনি বলেছিলেন, বাদশাহ ফয়সালের মৃত্যুর খবর রিয়াদে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট, পাড়া, রাস্তাঘাট এবং মাঠ সব ফাঁকা হয়ে যায়। চারিদিক নির্জন হয়ে পড়ে। চারিদিকে এক অদ্ভুত, বেদনাদায়ক নীরবতা ছিল।ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের জন্ম হয়েছিল রিয়াদে ১৯০৬ সালের ১৪ এপ্রিল। তার বাবা ছিলেন বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহমান। মা ফাতিহ বিনতে ছিলেন আব্দুল্লাহ ওয়াহাবের পরিবারের সদস্য। রিয়াদ জয় করার পর ফাতিহ বিনতেকে বিয়ে করেন বাদশাহ আজিজ।

ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের বয়স যখন মাত্র ছয় মাস, তখন মাকে হারান তিনি। দাদা-দাদির কাছে বড় হন, তাদের ওপরই নাতির প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্বও ছিল।ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালে আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহমানকে লন্ডনে আমন্ত্রণ জানালেও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার কারণে তিনি যেতে পারেননি। সেই সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, বড় ছেলে প্রিন্স তুর্কি তার পরিবর্তে লন্ডনে যাবেন। কিন্তু স্প্যানিশ ফ্লুর কারণে মৃত্যু হয় প্রিন্স তুর্কির।

শেষ পর্যন্ত এই সফরে যাওয়ার সুযোগ পান ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ। তিনিই সৌদি বাদশাহদের পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি ইংল্যান্ড সফর করেন। তার এই সফর পাঁচ মাস ধরে চলেছিল। সফরকালে এই তিনি ফ্রান্সও ভ্রমণ করেছিলেন।

বাবা আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহমান প্রায়শই তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ সেই দায়িত্ব নিখুঁতভাবে পালন করতে সক্ষম হবেন। আসির প্রদেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে সশস্ত্র বাহিনীসহ তাকে সেখানে পাঠানো হয়। সালটা ছিল ১৯২২। এই রণনীতি সফল হয়।

এরপর, ১৯২৬ সালে তাকে হেজাজের ভাইসরয় করা হয় এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহমানের মৃত্যুর পর বাদশাহ হন তার বড় ছেলে সৌদ এবং যুবরাজ হন ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ।

তবে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বাবার মতো তেমন নিয়ন্ত্রণ ছিল না বাদশাহ সৌদের। দেশীয় ও বৈদেশিক নীতির বিষয়েও তার উল্লেখযোগ্য কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। রাজপরিবার শিগগিরই তা বুঝতে সক্ষম হয়। এই কারণেই তার ওপর যুবরাজ ফয়সালকে প্রধানমন্ত্রী করার এবং তাকে আরও ক্ষমতা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়।

ততদিনে মিসরের শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করে সেখানকার ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছিলেন গামাল নাসের। সৌদি আরবেও অনুরূপ ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে ভেবে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

এদিকে, বাদশাহ সৌদ ও বাদশাহ ফয়সালের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই অব্যাহত থাকে। এরপর ১৯৬০ সালের ডিসেম্বর মাসে ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তিনি যুবরাজ ছিলেন।

তবে, কিছুদিন পর তিনি পারিবারিক সমর্থন লাভ করেন এবং দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন। শেষ পর্যন্ত বাদশাহ সৌদকে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য দাবি জানান তিনি।

সেখানকার ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা তার পক্ষে দুটি ফতোয়া জারি করে বার্তা দেন, দেশের মঙ্গলের জন্য বাদশাহ সৌদের ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। বাদশাহের পরিবারের সদস্যরাও সেই ফতোয়া সমর্থন করেন।

এরপর ১৯৬৪ সালের ২ নভেম্বর সৌদি আরবের শাসক হিসেবে ক্ষমতায় আসেন ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ।

• প্রগতিশীল বাদশাহ
ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজের বাদশাহ হওয়ার পর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন। ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভবিষ্যতে বাদশাহ নির্বাচনের জন্য একটা কাউন্সিল গঠন করেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী বাদশাহ কীভাবে নির্বাচিত হবে তার স্থায়ীভাবে সমাধান করা এবং পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ও তার সৎ ভাইদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা।

ক্ষমতায় এসে তিনি অনেক জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা জনসাধারণের মাঝে তাকে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সাহায্য করেছিল।

এর মধ্যে একটা ছিল সেই সিদ্ধান্ত, যেখানে তিনি বলেছিল সৌদি যুবরাজদের উচিত শিক্ষার জন্য নিজেদের সন্তানদের বিদেশে না পাঠিয়ে দেশের স্কুলগুলোতেই তাদের ভর্তি করা। একইভাবে, তিনি মেয়েদের শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন।

দেশের প্রথম বিচার মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনার ভিত্তি প্রস্তরও স্থাপন করেছিলেন তিনি। তার অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ছিল, ১৯৬২ সালে সে দেশে দাসপ্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা। এই প্রথা অবলুপ্ত করতে একটা আদেশ জারি করেন তিনি।

• বাদশাহ ফয়সালের হত্যাকারী
বাদশাহ ফয়সালকে হত্যাকারী ব্যক্তি ফয়সাল বিন মুসাইদ ছিলেন তার (বাদশাহ ফয়সালের) সৎ ভাই মুসাইদ বিন আব্দুল আজিজের ছেলে। ফয়সাল বিন মুসাইদের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৪ সালের ৪ এপ্রিল। বাদশাহ ফয়সালকে হত্যার দায়ে ১৯৭৫ সালের ১৮ জুন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রিয়াদের কেন্দ্রীয় চত্বরে উপস্থিত জনতার সামনেই তার শিরশ্ছেদ করা হয়।

ফয়সাল বিন মুসাইদের জীবন নিয়ে খুব বেশি লেখালেখি হয়নি। তবে তিনি পড়াশোনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সান ফ্রান্সিসকো স্টেট কলেজে ভর্তি হন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেন।

শাহ ফয়সালকে হত্যার পর প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। হত্যাকাণ্ডের পর, মন্ত্রিসভার এক বিবৃতিতে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘উন্মাদ’ বলেও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, ফয়সাল বিন মুসাইদ মানসিকভাবে সুস্থ আছেন।

তিনি মাদক সংক্রান্ত মামলার সঙ্গেও জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। সৌদি আরবে ফিরে আসার পরে, তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর নেপথ্যে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তিনি বিদেশে সৌদি আরবের সম্মানহানি করছিলেন।

বাদশাহ ফয়সালকে হত্যার ঘটনার বিষয়ে বলতে গিয়ে ড. মেই ইয়েমেনি বলেছেন, বাবাকে এর চেয়ে বেশি যন্ত্রণায় আর কখনও দেখিনি। আজও যখন বাবার মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তখন এটা ভেবে শিউরে উঠি সেই সময় আমার বাবা কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন।

বাদশাহ ফয়সালের মৃত্যুর পর আহমাদ জাকি ইয়ামানি ১১ বছর সৌদি আরবের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মেই ইয়েমেনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনকারী তিনিই প্রথম সৌদি আরবের নাগরিক ছিলেন। বিবিসি বাংলা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট