বাৎসরিক তাপমাত্রার রেকর্ড রাখার রীতির প্রচলনের পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণ বছরটি ছিল ২০২৪ সাল, অর্থাৎ গত বছর। ব্যাপক উষ্ণতা ও তাপমাত্রার জেরে উত্তর ও দক্ষিণমেরুসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক হিমবাহ দ্রুতহারে গলছে, ফলে বিগত বছরগুলোর মতো ২০২৪ সালেও বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।
জাতিসংঘের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ বিষয়ক অঙ্গসংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলোজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এর আগের বছর ২০২৩ সালে যে পরিমাণ তাপমাত্রা বেড়েছে, তার চেয়ে দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও। ডব্লিউএমও’র তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার বেড়েছে।
বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডসহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের উপস্থিতি প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকাই উষ্ণতা বৃদ্ধির মূল কারণ। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ জীবশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বন-জঙ্গল ধ্বংস, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ন বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাসের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য দায়ী।
২০১৫ সালে প্যারিসে জাতিসংঘের উদ্যোগে যে জলবায়ু সম্মেলন হয়েছিল, সেখানে সদস্যরাষ্ট্রগুলো এই মর্মে একমত হয়েছিল যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছিল সদস্যরাষ্ট্রগুলো। চুক্তিটি প্যারিস চুক্তি নামে পরিচিত।
সেই হিসেবে গত বছরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির তথ্য বেশ হতাশাজনক। তবে ডব্লিউএমও’র শীর্ষ বিজ্ঞানী, সমন্বয়ক ও এই প্রদিবেদেন প্রধান লেখক জন কেনেডি বলেছেন, “এক বছরে গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি হতাশাজনক। তবে তার মানে এই নয় যে প্যারিস চুক্তি ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। যদি আমাদের সদিচ্ছা থাকে, তাহলে এখনও আমরা এই সংকট মোকাবিলায় অনেক কিছু করতে পারি।”
প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গত বছর বিশ্বজুড়ে ঝড়, অতিবর্ষণ, খরার, দীর্ঘমেয়াদী তাপপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হারও ছিল বেশি। জাতিসংঘের হিসেব অনুসারে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০২৪ সালে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত ৮ লাখ মানুষ, যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ।