সাভারের আশুলিয়ার একটি বাজারে একাধিক ককটেল ফুটিয়ে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় লুট হওয়া ১৩ ভরি স্বর্ণালংকারসহ নগদ ৭৬ হাজার টাকা উদ্ধার করে ৬ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান। এর আগে গতকাল বিকেল ৩ টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সাভার, আশুলিয়া, রাজশাহী ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৬ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার মোঃ হক ভূঁইয়ার ছেলে মোঃ রিপন মিয়া (৪০), পাবনা জেলার সুজানগর থানার জোনাই প্রামানিকের ছেলে মো. আরিফ প্রামানিক (৩০), পাবনা জেলার আতাইকুর থানার মৃত করিম শেখের ছেলে মো. শাহ-আলম (৪৫), শাহ-আলমের ভাই আরমান শেখ, রাজমাহী জেলার কর্ণহার থানার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বাবু (৪৫) ও কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মো. মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ (৪৫)। এদের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম বাবু (৪৫) ছাড়া বাকি ৫ জন সরাসরি ডাকাতিতে অংশ নেয়।
পুলিশ সুপার জানায়, গত ৯ মার্চ রাত ৯ টার দিকে আশুলিয়া নয়ারহাট বাজারের দিলীপ স্বর্ণালয়ের সামনে দীলিপকে তার স্ত্রী স্বরস্বতী দাসের সামনে ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে স্বর্ণের ব্যাগ লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এঘটনায় স্বরস্বতী দাস মামলা দায়ের করলে খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে পুলিশ। পরে গতকাল বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জড়িতদের গ্রেপ্তারে সাভার, আশুলিয়া, রাজশাহী ও রাজবাড়ী জেলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মোট ৬ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে ৫ জন ডাকাত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যার পর স্বর্ণ লুট করে এবং একজন ডাকাতি মালামাল তার জিম্মায় রাখে।
আনিসুজ্জামান আরও জানান, ডাকাত রিপন (৪০) কে সাভারের যাদুরচর এলাকা থেকে, মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ (৪৫), শাহ আলম (৪৫) এবং আরমান (৩৭) কে আশুলিয়ার বারইপাড়া এলাকা থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় তারা চারজনসহ আরও ৮/৯ জন প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিল। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে চাঞ্চল্যকর দিলীপ হত্যা ও স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। তারা জানায় ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে ডাকাত ইমরান, তার দুই ভাই শাহ আলম ও আরমানসহ রিপন, আরিফ, আকাশ, তালিম ও মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ একটি গাড়ি ভাড়া করে নয়ারহাট এলাকায় স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। ইমরান ও আকাশ উক্ত ভাড়াটে গাড়ির ভিতরে অবস্থান করে এবং আরমান ও শাহ আলম ঘটনাস্থলের পাশে পাহারা দেয়। তালিম ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক তৈরী করে। রিপন ও আরিফ দুটো চাপাতি দিয়ে দিলীপকে কুপিয়ে নিস্তেজ করে। এসময় মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদ স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ভাড়া গাড়িতে ওঠে পরে। পরে ৮ জন মিলে ওই গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রিপন, শাহ আলম, আরমান ও মাসুদ রানা ওরফে কালা মাসুদের দেওয়া তথ্যমতে আরিফকে গতকাল রাজবাড়ির গোয়ালন্দ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৮ ভরি স্বর্ণ এবং স্বর্ণ বিক্রয়ের ৭৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারদের তথ্যমতে ডাকাতির স্বর্ণ ক্রয়ের সাথে জড়িত ইব্রাহিমকে রাজশাহীর কর্ণহাট এলাকা থেকে লুণ্ঠিত ৫ ভরি স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি দুটিও উদ্ধার করা হয়।
এসময় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলাম ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।