ফরিদপুরের সালথায় পূর্বশত্রুতার জেরে মো. জামাল মাতুব্বর নামে এক মৎস্যজীবীর পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে অন্তত চার লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।
শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে ভুক্তভোগী জামাল মাতুব্বর সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে সালথা থানায় এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতের কোনো এক সময় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নে গোপালিয়া গ্রামে পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটে।
জামাল মাতুব্বরের পুকুরটি আনুমানিক ৩০ শতাংশ জমির ওপর তার বাড়ি থেকে আনুমানিক আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ওই পুকুরে রুই, কাতলা, সরপুটি, বাটাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করা হচ্ছিল।
জামাল মাতুব্বর বলেন, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুকুরে মাছের খাবার দিয়ে তিনি বাড়িতে চলে যাই। শুক্রবার সকালে পুকুরে এসে দেখি সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এতে কমপক্ষে চার লাখ টাকার মাছ মরেছে আমার। এ সময় পুকুর পাড়ে ১৬টি গ্যাসের ট্যাবলেটের (বিষ) খোসা দেখতে পাই। পরে ট্যাবলেটের খোসাগুলো যাচাই-বাছাই করতে সালথা বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী মানোয়ার হোসেনের কাছে নিয়ে যাই। তিনি জানান বৃহস্পতিবার বিকেলে তার প্রতিবেশী আবুল বাসার মানোয়ারের কাছ থেকে এসব গাস ট্যাবলেট কিনে নিয়ে গেছে।
জামাল মাতুব্বর আরও বলেন, শত্রুতা করে আমার প্রতিবেশী আবুল বাসার এ কাজ করেছে বলে আমার ধারণা। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে সালথা থানায় আবুল বাসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযুক্ত আবুল বাসারের বাড়িতে তদন্তে যান। এতে আবুল বাসার ক্ষিপ্ত হয়ে জামাল মাতুব্বরের বাড়িতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে কেন থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন, মালেক মাতুব্বর, হুমাইন মাতুব্বর ও রাইফুল মাতুব্বর। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এরা জামালের পক্ষের লোক।
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত আবুল বাসার বলেন, হালি পেঁয়াজের ক্ষেতের চারপাশে দেওয়ার জন্য আমি একবক্স করে গ্যাস ট্যাবলেট কিনে আনি। কারো পুকুরে দেওয়ার জন্য কিনে আনিনি। অন্য কেউ ষড়যন্ত্র করে গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছগুলো নিধন করতে পারে। আর আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়ার কারণ জানতে জামালের বাড়ি গেলে আমাদের ওপর হামলা করা হয়।
সালথা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার জামান বলেন, বিষ দিয়ে মাছ নিধনের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীকে আইনগত সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ নিধনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে ফেরার পর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে আবার পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তিনি বলেন, অভিযোগটি যাচাই বাছাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।