‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া কোন কথা বলার নিয়ম নেই, হাসপাতালের অভ্যন্তরে কোন ছবি তুলতে পারবেন না আপনারা। মারামারি অথবা যে কোন অনিয়ম হলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রয়েছে তারা এসব দেখবেন। আপনারা এ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। আমাদের অনুমতি ছাড়া কোন তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন না। যদি আদালত কোন তথ্য চায় আমরা আদালতকে দেব।’ এমনটি বললেন লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ফাতেমা তুজ জোহরা।
সম্প্রতি উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালিয়া গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক গৃহবধু দিনমজুরের স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় বাড়ি দিলে সে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে গণমাধ্যম কর্মীরা তার কাছে তথ্য সংগ্রহের জন্য গেলে তিনি এসব কথা বলেন।
শুধু তাই নয় কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চলছে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বহিরাগতদের দিয়ে রোগীদের কাটা-ছেঁড়া সেলাই, ড্রেসিং, ইনজেকশন পুশসহ জরুরি নানাবিধ চিকিৎসা। এতে ঝুঁকি এবং আতঙ্কে থাকেন সেবাপ্রার্থী রোগীরা। এতে যে কোন ধরনের বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন স্বজনরা।
সরেজমিনে গেলে গণমাধ্যমকর্মীরা দেখতে পায় জরুরি বিভাগে একটি শিশুর পায়ে সেলাইয়ের কাজ করছেন তারেক নামের বহিরাগত এক ব্যক্তি। বাচ্চাটির পায়ে ২টি সেলাইসহ যাবতীয় কাজ করছেন তিনি।
সেলাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক সাংবাদিক অ আ আবীর আকাশকে জানান, ম্যাডাম বলেছে ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়া সেলাইয়ের কাজ করতে। দীর্ঘদিন এসব কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
সেলাই শেষ হলে কথা হয় তারেকের সঙ্গে। হাসপাতালের কেউ নয় বলে সে জানায়। তারেক ফার্মাসিস্ট কোর্স করেছেন। তার সার্জারির বিষয়ে অভিজ্ঞতার কোন অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি আছে কী না জানতে চাইলে সে জানান, তার সার্জারি বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কোন সার্টিফিকেট নেই। কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশে হসপিটালে সেলাইসহ আনুষঙ্গিক কাজ করে তারেক।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাতেমাতুজ জোহরা জানান, তারেককে শিশুটির পায়ে সেলাই করতে অনুমতি দিয়েছি।
এছাড়াও ডিউটি ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা রোগীদের বাহিরে দাঁড় করিয়ে স্বামী সন্তান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন ডিউটি রুমে।
তারেক কেন সার্জারির কাজ করছেন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সূত্রে জানা যায়, এভাবেই চলছে ৫০ শয্যা হাসপাতালে বহিরাগতদের দিয়ে প্রায় সময়ে বিভিন্ন কাটা-ছেঁড়া রোগিদের ড্রেসিং, সেলাই এবং ইনজেকশন পুশের কাজ। হাসপাতালের প্রতিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে ডিউটিরত চেম্বারে একজন করে বহিরাগত লোক দেখা যায়। এরা হাসপাতাল কেন্দ্রিক ডাক্তারদেরকে দিয়ে রোগিদের রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা লেখান, এবং সেগুলো চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কমিশন বাণিজ্য করেন। প্রতিনিয়ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বাণিজ্য ভিত্তিক চুক্তিবদ্ধ বহিরাগতদের হাসপাতালের ভিতরে এবং বাহিরে দেখা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মীর মো. আমিনুল ইসলাম মঞ্জু জানান, বহিরাগতদের হাসপাতালে প্রবেশ নিষেধ। তাছাড়াও জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার ছাড়া কেউ কাটা-ছেঁড়া সেলাই, ইনজেকশন পুশ করতে পারবে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের জানান, জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার ও চেকমো ছাড়া কাটা-ছেঁড়া সেলাই, ইনজেকশন পুশ, ড্রেসিং অন্য কেউ করতে পারবে না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।