
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রাসেলসে ইইউ-র সাথে আলোচনার পরেও পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলেন না৷ ওয়াশিংটনের সাথে সংঘাত এড়িয়ে ইউরোপ কীভাবে নিজস্ব সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাতিল করার পর ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷ ইউরোপ, চীন ও রাশিয়া এই চুক্তি চালু রাখার সদিচ্ছা প্রকাশ করলেও বাস্তবে তা সম্ভব হবে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়৷ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহম্মদ জাভাদ জরিফ বেইজিং ও মস্কো সফর করে ব্রাসেলসে এসে সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন৷ মঙ্গলবার জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তথা ইইউ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে তিনি এই মর্মে আশ্বাস পেলেও কোনো নিশ্চয়তা আদায় করতে পারলেন না৷
বৈঠকের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেন, “আমাদের এক আত্মীয় হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার বিভাগে রয়েছেন, এ বিষয়ে আমরা একমত৷ আমরা তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে বার করে আনতে চাই৷” তিনি আরও বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে সবাই মিলে বর্তমান সমস্যার বাস্তব সমাধান খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাবে৷
ইরান কীভাবে তার পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস বিক্রি চালিয়ে যাবে, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে লেনদেন কীভাবে চালু রাখা হবে এবং ইরানে ইউরোপের বিনিয়োগ কীভাবে নিরাপদ রাখা হবে, এই সব প্রশ্নগুলি বিশেষ গুরুত্ব পাবে৷ তবে মোগেরিনি স্বীকার করেন, এই মর্মে কোনো আইনি নিশ্চয়তা দেওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, যাবতীয় সমস্যা সত্ত্বেও পরমাণু চুক্তি রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বৈঠক সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করলেও ইউরোপের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা চান৷ তাঁর মতে, সূচনা ইতিবাচক হলেও আগামী কয়েক সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহের উপর সবকিছু নির্ভর করবে৷ তবে সেই প্রচেষ্টা বিফল হলে ইরানও চুক্তি বাতিল করে পরমাণু কর্মসূচি আরও জোরালোভাবে শুরু করার হুমকি দিয়েছে৷
অ্যামেরিকাকে ছাড়া পরমাণু চুক্তি চালু রাখা কত কঠিন হবে, মার্কিন প্রশাসন এর মধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ঠিক আগে ইরানের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে ওয়াশিংটন। সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও তার আওতায় রয়েছেন।
অ্যামেরিকা এককভাবে ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ চাপালে সেই ধাক্কা হয়ত সামলানো সম্ভব। কিন্তু ইরানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখলে বিদেশি কোম্পানিগুলিকেও সেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনলে ইউরোপের পক্ষে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে৷ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন খোলাখুলি এই সমস্যার উল্লেখ করেন। তবে মার্কিন চাপের মোকাবিলা করতে ইইউ পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে। বুধবার ইউরোপীয় কমিশনররা এ বিষয়ে আলোচনা করবেন৷
বুধবার বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনেও পরমাণু চুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সরকার প্রধানরা এ বিষয়ে নিজেদের মূল্যায়ন পেশ করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি বাতিল করা ছাড়াও জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তর এবং ইউরোপ ও চীন থেকে ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর শুল্ক চাপানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার ফলে ইউরোপে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে।