ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজছাত্র মিলন হোসেনকে (২২) অপহরণের ২৬ দিন পর তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সিজান আলী ও মুরাদের বাড়িঘর ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে অভিযুক্ত সিজান আলীর বসতবাড়িতে আগুন ও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আরেক অভিযুক্ত মুরাদের বাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। আগুন দেওয়ার আগে ঘরটিতে ব্যাপক ভাঙচুরও করা। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় সিজান ও মুরাদের পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে ছিলেন না।
অন্যদিকে মিলন হোসেনের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন এলাকাবাসী। পরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইসরাত ফারজানা মিলন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন স্বজনদের। এরপর নিহতের স্বজনরা ডিসি অফিস ত্যাগ করে চৌরাস্তায় এসে অবস্থান নেন এবং বিক্ষোভ করেন। এতে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে আবারও ডিসি চৌরাস্তায় এসে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
নিহত মিলন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে। মিলন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা।
বুধবার (১৯ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের জামালপুর ইউনিয়নের মহেশপুর বিটবাজার এলাকায় অপহরণকারীর বাসার পেছনের পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে মিলনের মরদেহটি উদ্ধার করে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। এর আগে রাত ১০টার দিকে সন্দেহভাজন দুইজন ও পরদিন আরেকজনকে আটক করে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন- ঠাকুরগাঁও সদরের মহেশপুর বিটবাজার এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সিজান আলী (২৮), আরাজি পাইকপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ (২৫) ও সালন্দর ইউনিয়নের শাহীনগর তেলিপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রত্না আক্তার রিভা (১৯)। এ সময় মুরাদের হেফাজত থেকে ৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মিলন হোসেনের সঙ্গে ফেসবুকে অজ্ঞাত একজনের যোগাযোগ হয়। একপর্যায়ে সেই ব্যক্তি মিলন হোসেনকে দেখা করার কথা বলেন। একই দিন দুপুরে দেখা করার জন্য পীরগঞ্জ থেকে জেলা শহরের মুন্সিরহাট পলিটেকনিক্যালের পেছনে লিচু বাগানে যান মিলন। এরপর রাতে মিলন বাড়িতে না এলে তার বড় ভাই হামিদুর রহমান মিলনের মুঠোফোনে কল করলে বন্ধ পান। মিলনকে ফোনে না পেয়ে তার ভাই পরিবার ও এলাকার লোকজনকে অবগত করলে সবাই মিলে মিলনকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও সন্ধান পায়নি। ওই দিন রাত ১টার দিকে মিলনের বাবাকে ফোন করে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি জানান যে, মিলন তাদের হেফাজতে রয়েছে। তারা ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
পরে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। অপহরণের তিন দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি মিলনকে হত্যা করেন অপহরণকারীরা। এরপরও মিলনকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ বাগিয়ে নেয় অপহরণকারী চক্রটি। এ ঘটনায় ‘প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ, ২৫ লাখেও মেলেনি মুক্তি’ শিরোনামে সংবাদ প্রচার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলন হোসেনকে উদ্ধারে মাঠে নামে। পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সিজান ও মুরাদকে আটক করে।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি সিজানের বাড়ির পাশে অব্যবহৃত টয়লেটের স্লাবের ভেতর থেকে বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মাটি খুঁড়ে অপহৃত মিলনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আরেক আসামি রত্না আক্তার ইভাকে আটক করে। ধারণা করা হচ্ছে অপহৃত মিলন অপহরণকারী চক্রকে চিনে ফেলায় তারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করছিলাম। কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা স্বীকার করে তারা মিলনকে খুন করেছে ও তাদের দেওয়া তথ্যমতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ বর্তমানে মর্গে রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।