কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসায় ইমরান হোসেন (২১) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিহতের স্বজনরা হাসপাতালটিতে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। পরে ওই হাসপাতালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার (১৬ মার্চ) রাতে কুমিল্লা নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউতে ট্রমা হসপিটালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ইমরান হোসেন কুমিল্লা নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২য় মুরাদপুর এলাকার প্রবাসী হুমায়ুন মিয়ার ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, ইমরান হোসেন দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। কুমিল্লা নগরীর ট্রমা হাসপাতালে ডা. আতাউর রহমানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক ইমরানকে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল আটটায় সার্জারি করার উদ্দেশ্যে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। চার ঘণ্টার অপারেশনের সময়ের কথা জানালেও অপারেশন সম্পন্ন হয় ৭ ঘণ্টায়।
পরে, রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কক্ষ (আইসিইউতে) স্থানান্তর করা হয় । তিনি দু-দিন ধরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
রোববার বিকেলে ইমরানের কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় স্বজনরা রোগী মারা গেছে দাবি করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার কথা বলেন। পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ আনানো হয় স্বজনদের দিয়ে।
সন্ধ্যার পর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে উত্তেজিত হয়ে স্বজনরা হাসপাতালটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
নিহতের চাচা জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাতিজাকে তারা সামান্য অপারেশনের কথা বলেছিল। কিন্তু তাকে ৭ ঘণ্টা ওটিতে রেখেছিল। পরে রোগীর সমস্যা হয়েছে বলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার কথা বলে। আমরা রাজি হই। কিন্তু লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পর ৩ দিন হয়ে গেলেও তারা আমাদের রোগীকে দেখতে দেয়নি। পরে নানা অযুহাতে আমরা আইসিউতে ঢুকে দেখি আমাদের রোগী মৃত। কিন্তু তারপরও তারা আমাদের কাছ থেকে মৃত রোগীর চিকিৎসা করানোর জন্য পরীক্ষা ফি ও ওষুধ কিনিয়েছে। ২৫ হাজার টাকার অপারেশনের কথা বলে তারা আমাদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেয়। একজন রোগীর ৩ দিনে লাখ টাকার ওষুধ কীভাবে লাগে? তাদের গাফিলতির কারণে আমাদের রোগী মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে ঘটনার পর থেকে অপারেশন করা ডা. আতাউর রহমান পালিয়ে রয়েছেন। নিহতের স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করলে হাসপাতালটির সব স্টাফ, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও পালিয়ে যান।
ডা. আতাউর রহমানের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
হাসপাতালটির পরিচালক আবদুল হককে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মো. বশির আহমেদ বলেন, আমি এই বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।