ম্যাটস, ডিএমএফ ইস্যুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ও পাঁচ দফা দাবিতে রংপুরে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন ও চিকিৎসকদের আন্দোলন কর্মসূচি কঠোর হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে শিক্ষার্থীরা কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ ছাড়া হাসপাতালের সকল আউটডোর সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নদের একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকরা।
এতে বক্তব্য দেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. আবু রায়হান, ডা. আনাস মাহমুদ, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডা. তাসকিন বিন মাহমুদ রাফিদ, ডা. ফরহাদ আক্তার, মেডিকেল শিক্ষার্থী ফাহিম তাজওয়ার, তৌহিদ ইসলাম, ডা. মাহমুদুল হাসান, ডা. আরিফ হাসনাত প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, চিকিৎসক সমাজের পেশাগত মর্যাদা ও অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রায় ২০ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যৌক্তিক এ বাস্তবায়নে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে চিকিৎসক সমাজ হতাশ হয়ে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। অবিলম্বে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে আউটডোরের পর সকল বিভাগের সেবা বন্ধ করে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে চিকিৎসকরা।
এদিকে পাঁচ দফার আন্দোলনকে ঘিরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সকল আউটডোর সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে চিকিৎসকরা। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন। এ ছাড়া গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে থাকা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মবিরতি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন ও মিড লেভেলের চিকিৎসকরা। দুপুরে রংপুর নগরীর সুমি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক নাসিফ।
সংবাদ সম্মেলনে এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যতীত কেউ নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে না পারা, আদালতে চলমান এ সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সকল রিট ১২ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, ডিপ্লোমা চিকিৎসক নামে বিভ্রান্তিকর কোনো পদবির প্রচলন না করা, রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করা, আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনঃনির্ধারণ ও মানহীন সকল ম্যাটস বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদ পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করা, অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো প্রণয়ন করার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অসংগতি দূরীকরণে চিকিৎসক সমাজের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো। অবিলম্বে কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আর্মি মেডিকেল কলেজের ডা. নাহিদ, ডা. রাফি, প্রাইম মেডিকেল কলেজের ডা. নাইম, ডেন্টাল কলেজের ডা. সাদসহ অন্যরা।