বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষক সমাজের ভূমিকাঃ মোঃ এস্কেন্দার আলী]
একবিংশ শতাব্দী হলো জ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির জয়যাত্রার সময়। বিশ্বব্যাপী উন্নত সমাজগুলো আজ যেভাবে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর নির্ভরশীল, ঠিক তেমনভাবেই বাংলাদেশও অগ্রসর হচ্ছে এক নতুন জ্ঞাননির্ভর যুগের দিকে। একটি টেকসই, স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনের জন্য চাই একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, আর সেই সমাজ গঠনের প্রধান চালিকাশক্তি হলো শিক্ষক সমাজ।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজের বৈশিষ্ট্যঃ
জ্ঞানভিত্তিক সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উন্নয়ন কর্মকান্ড ও নীতিনির্ধারণ হয় তথ্য, গবেষণা এবং
চিন্তাশীলতার ভিত্তিতে। এখানে নাগরিকেরা কেবল গ্রহীতা নয়, বরং তারা জ্ঞান-উৎপাদক ও সমস্যার
সমাধান দাতা। এ সমাজে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও মানবিক মূল্যবোধের সম্মিলন থাকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ধারণা থেকে “স্মার্ট বাংলাদেশ” অভিযাত্রা পর্যন্ত
পথচলায় জ্ঞানভিত্তিক সমাজের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
শিক্ষক সমাজের অবদানঃ
১. জ্ঞান বিতরণ ও দক্ষতা গঠনঃ শিক্ষকেরাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আধুনিক জ্ঞান ও বাস্তবমুখী দক্ষতা গড়ে তোলেন। শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণধর্মী ও উদ্ভাবনী চিন্তার পথ প্রদর্শক হন।
২. নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশঃ সঠিক মূল্যবোধ ছাড়া কোনো জ্ঞানই জাতির উন্নয়নে কার্যকর হয় না। শিক্ষকগণ এই মূল্যবোধ তৈরির ভিত্তি গড়ে দেন।
৩. তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের সক্ষম করে তোলাঃ
শিক্ষকগণ আধুনিক প্রযুক্তি, সফটস্কিল এবং ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করেন।
৪. গবেষণা ও উদ্ভাবনে অনুপ্রেরণাঃ
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকেরা সরাসরি গবেষণায় যুক্ত থেকে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করেন, শিক্ষার্থীদেরও
গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেন।
৫. সমাজে নেতৃত্ব প্রদানঃ
শিক্ষকগণ সমাজে পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেন। মানবাধিকার, জলবায়ু সচেতনতা,
সামাজিক ন্যায়বিচার ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করেন।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়ঃ
বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা যথেষ্ট হলেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছেঃ
১। প্রশিক্ষণের ঘাটতি।
২। কম বেতন ও প্রণোদনার অভাব।
৩। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সংকট।
৪। পাঠ্যক্রমে যুগোপযোগিতার ঘাটতি।
৫। সমাজে শিক্ষকের মর্যাদার ক্ষয়।
এই বাধাগুলো দূর করতে চাইলেঃ-
ক) পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়ন।
খ) পাঠ্যক্রমে বাস্তব ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা সংযোজন।
গ) গবেষণার জন্য বাজেট বৃদ্ধি।
ঘ) শিক্ষক সম্মাননা ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি।
ঙ) প্রযুক্তির ব্যবহারে শিক্ষাপদ্ধতির আধুনিকায়ন।
উপসংহার
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষকের ভূমিকা কোনোভাবেই খাটো করে দেখার নয়।
একজন শিক্ষক যেমন একজন মানুষকে আলোকিত করেন, তেমনি পুরো সমাজকে নতুন আলোয় জাগিয়ে তোলেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এমন একটি শিক্ষিত ও চিন্তাাশীল প্রজন্মের উপর, যাদের জন্ম হবে একজন আদর্শ শিক্ষকের হাত ধরেই।