ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধনে ১২১টি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সংস্কার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ।
সংযোজন, বিয়োজনসহ ডাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রস্তাবনাকে ২০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ২০টি ভাগকে আরও ১০১টি উপভাগে ভাগ করে মোট ১২১টি সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।
ছাত্র ইউনিয়নের মূল সংস্কার প্রস্তাবনায় গঠনতন্ত্রের শুরুতে প্রস্তাব সংযোজন; লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অংশে শিক্ষার্থী অধিকার; গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার সংযোজন; উপাচার্য ডাকসুর সভাপতি হবেন এই বিধি বাতিল এবং শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে সভাপতি নির্বাচনের বিধান সংযোজন; আবাসন বিষয়ক সম্পাদক, একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদকসহ মোট ৫টি পদের সংযোজন; স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এবং সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক পদের সংস্কার; হল সংসদের সভাপতি হবেন প্রভোস্ট এই বিধি বাতিল; গণভোটের বিধান সংযোজন; গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিধান সংস্কার সিন্ডিকেট নয় হবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গণভোটের মাধ্যমে; ডাকসুর সর্বোচ্চ ফোরাম হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদ সংযোজন- ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ডাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রার্থী হবে উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়, ডাকসুর সভাপতি অন্যান্য পদাধিকারীদের মতো সরাসরি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। এই পদে নির্বাচনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী (বর্তমান গঠনতন্ত্রের ১(ক) ও ১(খ) এ বর্ণিত শর্ত পূরণকারী) যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কোষাধ্যক্ষসহ নির্বাহী কমিটির সব পদাধিকারী সরাসরি ডাকসুর সদস্যদের তথা শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হবেন।
ডাকসুর প্রধান ভিপি (সহ সভাপতি) না বরং সভাপতি হবেন উল্লেখ করে বলা হয়, সভাপতি সংসদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন, আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন এবং সিদ্ধান্তগ্রহণে একটি মাত্র ভোট প্রদানের অধিকারী হবেন। সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। সভাপতি পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সংসদের যেকোনো সদস্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সহ-সভাপতি সংসদের প্রধান-নির্বাহী বলে বিবেচিত হবেন না। সহ-সভাপতি, সভাপতির দৈনন্দিন কার্যে সহযোগিতা করবেন এবং সভাপতির অনুপস্থিতিতে সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন।
সভাপতির ক্ষমতা হ্রাস প্রসঙ্গে বলা হয়, বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি সংসদের যেকোনো পদাধিকারীকে বরখাস্ত করা এমনকি পুরো সংসদ বিলুপ্ত করার ক্ষমতা রাখেন যা সর্বৈব একনায়কতান্ত্রিক বলে প্রতীয়মান হয়। এই ক্ষমতা সম্পূর্ণরুপে বিলোপ করতে হবে।
কিছু পদের নাম সংশোধন ও নতুন পদ যুক্ত প্রস্তাব করে বলা হয়, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদটির নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধ ও গণআন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক করতে হবে। বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, সমতা বিষয়ক সম্পাদক, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক, একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক পদ সংস্কার করে সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকে রূপান্তর করে কাজের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদ সংযোজন করতে হবে।
অনুষদ/ইনস্টিটিউট সংসদ গঠনের কথা জানিয়ে বলা হয়, অনুষদ/ইনস্টিটিউটগুলো শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন বা শিক্ষাকার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। একাডেমিক যাবতীয় বিষয়াদি বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর এই অঙ্গ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়ায় কেবল হল সংসদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শতভাগ শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ডাকসুর কার্যপরিধি একাডেমিক স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত করতে অনুষদ/ইনস্টিটিউট সংসদের গঠন অপরিহার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক অনুষদে এবং ইনস্টিটিউটে ওই অনুষদ বা ইন্সটিটিউটে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই সংসদ গঠিত হবে। অনুষদ বা ইন্সটিটিউটে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার নিজের অনুষদ বা ইনস্টিটিউটের ছাত্র সংসদের সদস্য বলে বিবেচিত হবেন।
ডাকসুর কেন্দ্র নির্ধারণ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে একাডেমিক ভবনে। আগের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট দখলদার গোষ্ঠীর নিজ স্বার্থে হলে নির্বাচনে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ভোটদানে বাধাপ্রদান, নানাবিধ কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করার ঘটনা প্রতিরোধ ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটদানে স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনায় এই সংস্কার আনয়ন জরুরি। ঢাবির অনুষদ এবং ইনস্টিটিউটগুলোর একাডেমিক ভবনে নির্বাচনী বুথ স্থাপন করা হবে এবং নির্দিষ্ট বুথসমূহে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, নিজ নিজ হল ও অনুষদ সংসদের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা নির্বাচনের জন্য ভোটপ্রদান করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসুর সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।