আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা): ঢাকার ধামরাইয়ে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস মমতাজ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকান্ডের মূলহোতা শরীফ প্রধান (৩৭) কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাব-৪, সিপিসি-২ এর (নবীনগর ক্যাম্প) কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাকিব মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান। এর আগে, সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) রাজধানীর কালশী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার শরীফ প্রধান পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মকর্তা ও বিবাহিত। তিনি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার কাচারীকান্দি পাঁচকিস্তা গ্রামের বাসিন্দা। তবে ২০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছেন। অপরদিকে ভিক্টিম মমতাজ বেগমও একই উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করতেন।
জব্দকৃত মোবাইল ও টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪, সিপিসি-২ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাকিব মাহমুদ খান জানান, মমতাজ ও শরীফ সম্পর্কে বেয়াই-বেয়াইন। দেশের বাড়িও একই এলাকায়। এক মাস আগে মমতাজকে আশুলিয়ায় এনে গার্মেন্টসে চাকরির ব্যবস্থা করেন শরীফ। সেই সঙ্গে মমতাজকে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় একটি বাসাও ভাড়া করে দেন তিনি। সেখানে শরীফ নিয়মিত যাতায়াত করতেন। উভয়ের মধ্যে আর্থিক লেনদেন ও অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্যের জেরে ভিক্টিম মমতাজকে শরীফ হত্যা করার পরিকল্পনা শুরু করে। তার পরিকল্পনা মতে মমতাজের বাসা পরিবর্তন করে নতুন স্থানে তাকে বাসা ভাড়া করে দেন। একই সাথে মমতাজের নামে রেজিষ্টারকৃত সীম দিয়ে শরীফ তার সাথে যোগাযোগ করেন। শরীফ পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাপদ জায়গা খুজতে থাকেন। ঘটনার আগের দিন ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের কেলিয়া এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশের ঘটনাস্থল ভুট্টাখেত পরিদর্শন করেন। শরীফ ৮ জানুয়ারি বিকেল বেলা মমতাজকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ধামরাই এলাকায় নিয়ে যান। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তারা ঘুরতে ঘুরতে ঘটনাস্থল ভুট্টা ক্ষেতের দিকে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে শরীফ তার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার সাথে থাকা রশি দিয়ে প্রথমে মমতাজের গলায় পেঁচিয়ে ধরেন। চেঁচামেচি যেন করতে না পারে সেজন্য পরিহিত ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ করে মমতাজকে হত্যা করেন। এরপর মমতাজের ব্যবহৃত মোবাইলটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিএনবি এলাকায় ফেলে চলে যান। পরে গত ৯ জানুয়ারি বেলা তিনটার দিকে ধামরাইয়ের কেলিয়া এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উত্তর পাশের একটি ভুট্টাখেত থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মমতাজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই ধামরাই থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ভিক্টিম মমতাজ বেগম।
র্যাব কর্মকর্তা রাকিব মাহমুদ খান আরও জানান, হত্যাকান্ডের পর কাউকে কোন কিছু বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকেন শরীফ। একই সাথে তার কর্মস্থলে নিয়মিত যাতায়াত করেন। পরবর্তীতে র্যাব তার বিষয়ে অনুসন্ধান করছে বুঝতে পেরে শরীফ আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় শরীফ সিলেট, গাজিপুর, ঢাকা মালিবাগ, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় গোপন করে পালিয়ে থাকেন এবং সে তার নাম পরিবর্তন করে জোবায়ের নামে পরিচয় দেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এ ধরনের অপরাধ দমন ও জনসাধারণের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে র্যাব-৪ এর অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান র্যাবের এই চৌকস কর্মকর্তা।