আদালত চত্বরে ভ্যান হারিয়ে দিশেহারা আনারুল-আরেফা দম্পতি
স্ত্রী আরেফাকে নিয়ে শুনানিতে অংশ নিতে ভ্যান চালিয়ে আদালতে আসেন আনারুল ইসলাম। কিন্তু শুনানিতে অংশ নেওয়া হয়নি তার। আদালতের নিচে রাখা জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ভ্যানটি হারিয়ে দিশেহারা স্বামী-স্ত্রী হাউমাউ করে কাঁদছেন। তাদের কান্না দেখে কারও কারও চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে এলেও নিরুপায় তারা। তাই ভ্যানটি উদ্ধারে পুলিশের সহযোগিতার আকুতি সবার কণ্ঠে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর জেলা দায়রা জজ আদালত চত্বরের সামনে ভ্যান চুরির এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী আনারুল ইসলামে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর সরকারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। চার সদস্যের সংসারে আয় রোজগারের একমাত্র ভরসা ছিল ভ্যানটি। এ কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন অসহায় এই দম্পতি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি খুঁজে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনারুল। স্ত্রীর চোখে তখন বিস্ময়, আতঙ্ক আর অসহায়ত্বের ছাপ। আনারুল মিয়া তখন হাউমাউ করে কাঁদছেন আদালত প্রাঙ্গণে। তাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন কিছু মানুষ।
হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আনারুল বলেন, সাত বছর আগোত অনেক কষ্ট করি ১১ শতক জমি কিনছি। তাক গ্রামের এক মানুষ দখল করছে। চেয়ারম্যান মেম্বারোক বিচার দিয়া অনেক চেষ্টা করিও জমি উদ্ধার করিবার পাই নাই। হামাক মারধর করি হাসপাতালত পাঠাইছিল। ওই জন্যে গরু বেঁচে আদালতোত মামলা করছি। আইজ সেই মামলার শুনানি আছলো। ভ্যানটা নিচোত থুইয়া তিনতলাত উঠনো আর নামানো। ইয়ারে ফাকোত দেখি হামার ভ্যানখান নাই। ৮০ হাজার টাকা দিয়া এনজিও থাকি ঋণ নিয়া ভ্যান কিনছি। আইজ আদালতোত থাকি মোর সেই ভ্যানটা চুরি হইল, এ্যালা খামো কী, কেমন করি কিস্তি দিমো?
আনারুলের স্ত্রী আরেফা বেগম বলেন, ভ্যানটা নিচোত থুইয়া তিনতলায় গেছি। অল্প একনা পর (১৫-২০ মিনিট) আসি দেখি ভ্যান নাই। ওই ভ্যানখানে হামার সম্বল। যেকোনো প্রকারে হামাক ভ্যানখান বের করি দেন বাহে। হামরা গরিব মানুষ, ভ্যান না পাইলে কী করি খামো।
আদালত চত্বরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আসা মাইনুল ইসলাম নামে এক সংবাদকর্মী বলেন, তাদের (স্বামী-স্ত্রী) কান্না দেখে আমার নিজের চোখে পানি চলে এসেছে। আদালতের মতো জায়গা থেকে দিনে দুপুরে এমন চুরির ঘটনা সত্যি দুঃখজনক। আশা করছি, পুলিশ আন্তরিকতার সাথে সন্ধান করে অসহায় এই মানুষের উপার্জনের অবলম্বনটি উদ্ধার করবে। সামর্থবান মানুষেরা যদি এগিয়ে আসে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি হয়তো আরেকটি নতুন ভ্যান কিনতে পারবেন।
এদিকে চোখে মুখে অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠা আনারুল ইসলাম ভাঙা কণ্ঠে জানান, সহায় সম্বল বলতে বসতভিটা ও ১৩ শতক আবাদি জমি তার। বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় ১৩ শতক জমি বন্ধক দেন তিনি। ২০ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। অনেক কষ্টে ২০১৯ সালে একই এলাকার আফাজ, দুলাল ও আফজালের কাছে বাড়ির পাশে ১১ শতক জমি কিনেন। কিন্তু সেই জমি দখল করে নেন মিলন নামের এক ব্যক্তি। স্থানীয়ভাবে অনেক চেষ্টা করেও জমি উদ্ধার করতে না পারায় আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার শুনানিতে হাজির হতে আজ সকাল ৯টায় স্ত্রীকে ভ্যানে বসিয়ে নিজে ভ্যান চালিয়ে আদালতে আসেন তিনি। নিচে রিকশাটি রেখে তৃতীয় তলায় ওঠেন। ওপর থেকে কিছুক্ষণ পর এসে দেখেন নিচে রাখা ভ্যানটি নেই। এখন সংসার, মামলার খরচ আর মানুষের ঋণ পরিশোধ করতে অন্যের সহযোগিতা নেয়া ছাড়া তার সামনে কোনো বিকল্প উপায় নেই।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, আদালত চত্বর থেকে ভ্যান চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ভ্যান উদ্ধারে কাজ চলছে।