৫ আগস্টের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রাপ্য ও সঠিক চিকিৎসা সেবার কোনো সুযোগ ছিল না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা শারীরিকভাবে বিভিন্ন ধরনের আঘাপ্রাপ্ত হন এবং গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা প্রদানের দিক থেকে আমাদের বিশাল এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছিল।
সোমবার (১৭ মার্চ) বিএমইউতে আয়োজিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে ‘মেডিক্যাল রেসপন্স অব বিএসএমএমইউ টু দি জুলাই আপরাইজিং : সার্জিক্যাল অ্যান্ড অর্থোপেডিক পারসপেকটিভ’ শীর্ষক সেন্ট্রাল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএমইউ উপাচার্য বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছিলেন, সরকার পরিবর্তনের পূর্বে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে তাদের প্রাপ্য সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের সুযোগ ছিল না। তবে ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের দুয়ার খুলে যায় এবং আমাদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় বিএসএমএমইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, শুরুতে আমাদের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, জেনারেল সার্জারি বিভাগ, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ আহতদের চিকিৎসায় বিরাট অবদান রাখে। পরবর্তীতে মনোরোগবিদ্যা বিভাগ এবং বর্তমানে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন আহতদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনেও সহায়তা প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ডা. শাহিনুল আলম বলেন, বর্তমান প্রশাসনের সহায়তায় যারা বিভিন্নভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও জখম হয় তাদের চিকিৎসায় বিশেষত জেনারেল ও অর্থোপেডিক সার্জন ও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞরা আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে কাজ করেন। কাটা ও গুলির আঘাত, রক্তক্ষরণ, হাড় ভেঙে যাওয়া, জয়েন্ট ও স্নায়ু সমস্যা চিকিৎসায় তারা বিশেষ অবদান রাখেন। বর্তমানে আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদান ও পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে, এক্ষেত্রেও কাজ করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন ও সার্জন, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় এই বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য অবদান রেখেছে। সার্জিক্যাল ও অর্থোপেডিক সংক্রান্ত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আহতদের পুনরুদ্ধারে বিরাট অবদান রেখেছে। এর ফলে অনেক আহত রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং অনেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করেছেন।
এসময় অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের হ্যান্ড সার্জন ডিভিশনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ২০০ এরও বেশি রোগীকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসায় প্রদান করা হয়। তার মধ্যে ৬৫ জন রোগীকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়, যার মধ্যে বুলেট ইঞ্জুরি ২৬, পিলেট ইঞ্জুরি ২১, শারীরিক আঘাত ১৬, মেরুদণ্ডের ব্যথা ১৫, উপর থেকে পড়ে আঘাত পাওয়া ২ জন রোগী রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন ইউনিটে ৩৯টি মেজর অপারেশন করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে পিলেট পাওয়া যায়, যেগুলো বেশি ব্যথার কারণ অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয়। বেশিরভাগ অপারেশন নার্ভ ইঞ্জুরির এবং নার্ভ ইঞ্জুরির বিভিন্ন ধরনের নার্ভ সার্জারি করা হয়। যেমন- নার্ভ রিপেয়ার, গ্রাফটিং, নিউরোলাইসিস, নার্ভ ট্রান্সফার ও টেনডন ট্রান্সফার অন্যতম। ১৩ জন রোগীর বিভিন্ন ধরনের ভাঙ্গা হাড়ের অপারেশন করা হয় এবং এছাড়াও কিছু অপারেশন ছাড়াও চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাঁটুর বুলেট আথ্রোসকপির মাধ্যমে বের করা হয়। মেরুদণ্ডের আঘাত পাওয়া রোগীদের কনজারভেটিভ চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, এসবের বাইরেও আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়া রোগীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে সু-চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বেশিরভাগ রোগীর চিকিৎসায় ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলেটেশন বিভাগের সহায়তা নেওয়া হয়। এসব রোগীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফ্রি বা বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছার সভাপতিত্বে ও ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদের (মামুন) সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেন্ট্রাল সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।