ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধের মাধ্যমে বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, বিষয়টি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তার (ডিএমপি কমিশনার) এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
রোববার (১৬ মার্চ) রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে টিআইবি আয়োজিত ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!’ শীর্ষক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের ওপর সবচেয়ে বেশি নারীর অধিকার হরণের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব, সেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশ; পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার না করতে গণমাধ্যমকে অনুরোধ করে তখন আমাদের অবাক হতে হয়। তাদের এ অবস্থানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়। কারণ, এর মাধ্যমে তিনি যেটা করছেন, ডিএমপি কমিশনার বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন। ধর্ষকের সুরক্ষা দেওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। কোনো অবস্থায় এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
এর আগে শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক সংবাদপত্রের ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমি দুটি শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ‘ধর্ষণ’। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নিপীড়ন’ বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।’’
মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে, তাদের আচরণে, কথায়-বার্তায়, চর্চায় কিন্তু আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। খুবই দুঃখজনক বিষয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সেখানে চর্চার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ধর্ষণ যখন ঘটবে অত্যন্ত জোরালোভাবে আরও সেটিকে প্রচার করতে হবে। যাতে এ বিষয় মানুষের নজরে আসে।
খুনিকে চোর বলতে পারবেন না উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশকে তো আমি আনসার বলতে পারব না। পুলিশ পুলিশই। পুলিশ যেভাবে কলঙ্কিত করেছে নিজেদের, সে কারণে কী মানুষ বলেছে ‘পুলিশ’ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না? সেই পুলিশ কীভাবে ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না– এ ধরনের মন্তব্য রাখতে পারে। সেটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সহকারী সমন্বয়ক সাইমুম মৌসুমী।