অন্যের অটোরিকশা দৈনিক চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে চালান আলমগীর মল্লিক। এ থেকে যা রোজগার হয়, তাই দিয়ে টেনেটুনে কোনো রকমে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চলে তার সংসার। তবে, আলমগীর মল্লিকের সেই ভাড়া অটোরিকশাটিই ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছিনতাইয়ের সময় তার গলায় ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি দাঁত ভেঙে দিয়েছে তারা। বর্তমানে হাসপাতালে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আলমগীর মল্লিক। এমন পরিস্থিতিতেও দুশ্চিন্তা জেঁকে ধরেছে তাকে। কথা বলতে না পারলেও ইশারায় সবাইকে বলতে চেষ্টা করছেন, অটোরিকশার মালিককে এখন কী জবাব দেবেন? কীভাবে চলবে তার সংসার?
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাত পৌনে ১২টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
ভুক্তভোগী রিকশাচালক আলমগীর মল্লিক শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের হাজতখোলা গ্রামের আব্দুর রহমান মল্লিকের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (২৯ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে আংগারিয়া বাজারের মন্দির সংলগ্ন ফ্যামিলি সুপার শপের সামনে থেকে তিনজন ব্যক্তি যাত্রী সেজে ৩০০ টাকা ভাড়ায় আলমগীরের অটোরিকশায় চড়েন। তারা বালাখানা নামক স্থানে নামতে চাইলে কথা মতো তাদের সেদিকে নিয়ে যান আলমগীর। অটোরিকশা সাবেক আইজিপির বাড়ির কাছাকাছি স্থানে পৌঁছালে যাত্রী সেজে থাকা ছিনতাইকারীরা আলমগীরকে মারধর শুরু করেন। এ সময় তারা ছুরি দিয়ে আলমগীরের গলায় আঘাত করেন।
গলায় ছুড়ির আঘাত ও মারধরে তার তিনটি দাঁত ভেঙে গেলে আলমগীর অচেতন হয়েন। পরে সুযোগ বুঝে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
আলমগীর ছোটবেলা থেকেই রিকশা-ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। রিকশা চালিয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখনও রিকশা চালিয়েই তার স্ত্রী ও তিন ছেলের আহার জোটান। বসতঘর ছাড়া তার নিজস্ব কোনো কৃষি জমি বা পুঁজি নেই। সে কারণে আংগারিয়ার সিরাজুল ইসলাম টুটুল মালতের ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা তিনি দৈনিক ২০০ টাকা চুক্তিতে ভাড়ায় নিতেন।
সেই অটোরিকশাটি চালিয়ে উপার্জন করে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে কোনোমতে দিন চলত তার। কিন্তু দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও মারধর করে অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ায় এখন দুচিন্তায় পড়েছেন আলমগীর।
আমরা অটোরিকশাটি ফেরত চাই, যারা আমার চাচাকে মেরেছে তাদের বিচার চাই।