৪২ বছরের নিপাট ভদ্রলোক শ্রীরেণু ত্রিপাঠী। পেশায় একজন সংস্কৃতির শিক্ষক। তবে যৌবন পেরিয়ে মধ্যবয়সে এসে পৌঁছালেও এই ব্যক্তিই কিনা আপাদমস্তক ‘ভার্জিন’। কখনো প্রেম করেননি, এমনকি কোনো মেয়ে বন্ধুও ছিল না।
আর মাধবান অভিনীত শ্রীরেণু চরিত্রটি সুদর্শন হলেও সহজ-সরল ও সত্যবাদী। যার ফলে একজীবনে কোনো নারীকেই ঠিক পটাতে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে তার বিয়ের পাত্রী খুঁজতে খুঁজতে ভাই-ভাবিও ক্লান্ত। শেষমেষ একাকিত্ব কাটাতে বন্ধুর পরামর্শে এক ডেটিং অ্যাপে যুক্ত হন শ্রীরেণু। যার নাম ‘আপ জেইসা কোই’।
সেই ডেটিং অ্যাপে পরিচয় গোপন রেখে কথা বলা যায়। শুরু হয় কয়েকজন নারীর সঙ্গে শ্রীরেণুর কথোপকথন। এর মধ্যেই হঠাৎ ভাইয়ের প্রতিবেশীর বোনের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব পান তিনি।
মধু বোস চরিত্রে ফাতিমা সানা শেখ। কলকাতার মেয়ে, বয়স ৩২। নারীদের কাছ থেকে অসংখ্যবার রিজেক্ট হওয়া শ্রীরেণু ধরেই নেয় এবারও তার গাঁটছড়া বাধা হবে না। তবুও ভাবির অনুরোধ চলে যান মধুকে দেখতে।
ফরাসি ভাষার শিক্ষিকা মধু বোস। একইসঙ্গে রূপবতী ও স্পষ্টভাষী। যাকে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়া যায়। শুরুতে নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী না থাকলেও একটা সময়ে মধুর বন্ধুত্বের ছোঁয়ায় কিশোর প্রেমিকের মতো ভালোবাসতে শুরু করে শ্রীরেণু। তাদের প্রণয় যখন পরিণয়ে রুপ নেবে তখন গল্পে হাজির নতুন টুইস্ট।
মাধবন জানতে পারেন, ডেটিং অ্যাপে তার সঙ্গে কথা বলা নারীদের একজন হচ্ছেন- বাগদত্তা মধু বোস। তারপর যা হওয়ার তাই হলো। উপমহাদেশীয় পুরুষের ঐতিহ্য বজায় রেখে মধুকে দুশ্চরিত্রা খেতাব দিয়ে বিয়ে ভেঙে দিলেন শ্রীরেণু।
একসঙ্গে দুজনই ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করলেও সব দোষ গিয়ে পড়ল সেই নারীর ওপর। সিনেমায় মাধবান যেন আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, উপমহাদেশীয় পুরুষতান্ত্রিক সেই মানসিকতা। নারী আধুনিক হতে পারবে কিন্তু সেই সীমা নির্ধারণ করে দেবে একজন পুরুষ। নারী ফ্রেন্ডলি হলেও চলে কিন্তু এর বেশি চাহিদা প্রকাশ করলেই তার চরিত্র খারাপ। অথচ অপর প্রান্তে দাঁড়ানো পুরুষটি সেই অবদমিত যৌন চাহিদা প্রকাশের জন্য বিন্দুমাত্র লজ্জিত নন।
সমাজের অলিখিত বিধানে শ্রীরেণুর কাছে চাপা পড়ে যায় মধুর সত্যিকারের ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা যা যেকোনো পুরুষেরই কাম্য। কারণ মধুই একমাত্র নারী যে শ্রীরেণুকে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করতে চায়নি, উল্টো তার সরলতাকে গ্রহণ করেছিল মিষ্টি আলিঙ্গন দিয়ে।
সমাজের দাঁড় করানো স্ট্যান্ডার্ডে যে ভালোবাসার আড়ালে পুরুষের আধিপত্য প্রকাশ পায়, সেটাই পর্দায় দুই গুণী শিল্পীর (মাধবন ও ফাতিমা সানা) অভিনয়ে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে।
যদিও মধু বোসের কাছে ভালোবাসা মানে ছিল, ইক্যুয়েলিটি। একটা সম্পর্ক, যেখানে থাকবে সমান সমান প্রেম, সমান সমান শ্রদ্ধা। হাত ধরে দুজনে চলবে পাশাপাশি। কেউ ক্লান্ত হয়ে গেলে অন্যজন দাঁড়াবে, তাকে সাহস জোগাবে। যেখানে কেউ কারো প্রভু নয় বরং বন্ধু হয়ে জীবনের পথ পাড়ি দেবে।
এদিকে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পরে হঠাৎ করেই আবারও একাকিত্বে ভুগতে শুরু করে শ্রীরেণু। ফিরে যেতে চায় মধুর কাছে। কিন্তু কলকাতার মেয়ে মধু বোস কি সেই সুযোগটা আর দেবে শ্রীরেণুকে?
কিছু অপ্রত্যাশিত মোড়, হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্ত, পূর্ণতা আর প্রাপ্তির ছোঁয়া। সাধারণ জীবনের গল্প থেকেই অসাধারণ কিছু উপলব্ধি— সবকিছু মিলিয়ে দারুণ এক সিনেমা ‘আপ জেইসা কোই’।
কলকাতার পথেঘাটে জমে ওঠা প্রেম, বিখ্যাত মান্না দে’র কফি হাউজ, লাইব্রেরির লুকোচুরি খেলা আর বাঙালি পরিবারের ঐতিহ্যে ভরা পূজার আয়োজন সব মিলিয়ে যেন চোখের প্রশান্তি এনে দিবে ছবিটি।
বিবেক সোনি পরিচালিত রোমান্টিক কমেডি ড্রামা জনরার ‘আপ জেইসা কোই’ চলতি মাসেই মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সে। গল্প বলার ধরণ, শিল্পীদের অভিনয়, চমৎকার কিছু গানে ভরপুর ফুল প্যাকেজ বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে সিনেমাটি।
আর মাধবন, ফাতিমা সানা শেখ ছাড়াও সিনেমাতে আরও অভিনয় করেছেন সাহেব চ্যাটার্জি, আয়েশা রাজা, নামিত দাস, মানিশ চৌধুরী।