চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত নাসিরাবাদ দুলাহার উচ্চ বিদ্যালয়। গত ১৬ মে ঝড়-বৃষ্টিতে মাটির দালান দিয়ে নির্মিত স্কুলটির টিনের ছাদ উড়ে গেছে। তারপর থেকেই খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় সঠিকভাবে পাঠদানে দুশ্চিন্তায় আছেন শিক্ষকরা। আর পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এমন অবস্থায় বিদ্যালয়টিতে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭২ জন এবং এর বিপরীতে শিক্ষক আছেন ১৩ জন। এ ছাড়া তিনজন কর্মচারিও আছেন। স্কুলটির উত্তরদিকে মাটির তৈরি তিনটি কাঁচা ঘর এবং দক্ষিণ দিকে একতলা বিশিষ্ট দুটি পাঁকা ঘর আছে এবং এগুলোতেই ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া দক্ষিণ দিকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের অফিস কক্ষও অবস্থিত। তবে নাচোল উপজেলার বেশিরভাগ স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও বিগত ৫২ বছর যাবৎ এই স্কুলে মাটির ঘরে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। গত ১৬ মে দিবাগত রাতে ঝড়-বৃষ্টিতে মাটির দালান দিয়ে নির্মিত স্কুলটির টিনের ছাদ উড়ে যায় এবং তারপর থেকেই অস্থায়ীভাবে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সোমবার (১৯ মে) সরেজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, টিন উড়ে যাওয়া মাটির দালান ঘরের সামনে ও নিম গাছের নিচে বেঞ্চ পেতে অস্থায়ীভাবে চলছে ক্লাস। গ্রিষ্মকালের গরমে যখন জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন তীব্র রোদের মধ্যে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া মাটির দালান দিয়ে তৈরি ক্লাসরুমগুলোর টিনের ছাদ ঝড়ে উড়ে যাওয়ায় ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
স্কুলটির অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ বলেন, গত ১৬ মে কালবৈশাখী ঝড়ে আমাদের স্কুলের টিনের চাল উড়ে গেছে। এরপর থেকে আমরা খোলা মাঠে আকাশের নিচে ক্লাস করছি। তীব্র গরম ও রোদ্রে ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে। তাই আমাদের ক্লাস ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
ষষ্ঠ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মরিয়ম খাতুন বলেন, আমরা আগে থেকেই মাটির দালান ঘরে কষ্ট করে ক্লাস করতাম। এখন টিনের চাল উড়ে যাওয়ায় খোলা মাঠে ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে আমাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে।
মাসুদ হাসান নামে এক অভিভাবক বলেন, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে আসতে চায় না। তারা খোলা আকাশের নিচে রোদে বসে ক্লাস করতে চায় না।
নাসিরাবাদ দুলাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সারোয়ার বলেন, স্কুলটিতে ভালো অবকাঠামো না থাকায় আগে থেকেই আমরা কষ্ট করে পাঠদান কার্যক্রম চালু রেখেছি। এখন ঝড়ে টিনের চাল উড়ে যাওয়ায় এবং ভবনটির ক্লাসরুম অনুপযোগী হওয়ায় খোলা মাঠে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের পাঠদানে কষ্ট হচ্ছে। তাই শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে দাবি জানাচ্ছি, তারা যেন আমাদের স্কুলে পাঁকা ভবন তৈরির উদ্যোগ নেয়।
নাসিরাবাদ দুলাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমাদের এই স্কুলটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ অবধি সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। গত ১৬ মের কালবৈশাখী ঝড়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের উত্তর দিকের মাটির ভবনের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে পড়ে। এজন্য পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার লক্ষে শ্রেণিকক্ষের বাইরে খোলা আকাশের নিচে তিনটি শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন আমাদের প্রতি সদয় হয়। সেইসঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠানে একটি পাঁকা ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
নাচোল উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নীলুফা সরকার বলেন, ইতোমধ্যে আমি স্কুলটির বিষয়ে অবগত হয়েছি এবং ডিসি স্যারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। এ ছাড়া ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিদ্যালয়টির নতুন অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল।