সোমবার , ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২রা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

২৭ হাজার ক্ষুধার্ত শিশুর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য ধ্বংস করছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ২৭ হাজার অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর জন্য বরাদ্দকৃত জরুরি খাদ্য — প্রায় ৫০০ টন শক্তিশালী উচ্চ-ক্যালোরির বিস্কুট — নষ্ট হয়ে গেছে এবং এগুলো এখন ধ্বংস করা হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

মূলত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সিদ্ধান্তে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ হয়ে যাওয়াই এই খাবারগুলো নষ্ট হওয়ার মূল কারণ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

স্থানীয় সময় বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য দিতে গিয়ে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ম্যানেজমেন্ট) মাইকেল রিগাস বলেন, এই খাদ্যসামগ্রীগুলো দুবাইয়ের একটি গুদামে পড়ে ছিল এবং চলতি জুলাই মাসেই এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, খাবারগুলো নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হলো গত ১ জুলাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সিদ্ধান্তে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ হয়ে যাওয়া। রিগাস বলেন, “আমার মনে হয় ইউএসএআইডি বন্ধ হওয়ার শিকার হয়েছে এই খাদ্যগুলো। এগুলো নষ্ট হওয়ায় আমি নিজেও মর্মাহত।”

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের হাতে আসা ৫ ও ১৯ মে তারিখের দুটি অভ্যন্তরীণ ইউএসএআইডি মেমো এবং সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র অনুযায়ী, মার্কিন কর্মকর্তারা গত জুন মাসে শেষ পর্যন্ত ৬২২ টন বিস্কুট বাঁচাতে সক্ষম হন— যেগুলো পাঠানো হয় সিরিয়া, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে। কিন্তু বাকি ৪৯৬ টন বিস্কুট — যার বাজারমূল্য ছিল ৭ লাখ ৯৩ হাজার ডলার — পচে যায় এবং এখন তা ধ্বংস করে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে।

আল জাজিরা বলছে, নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবারগুলো দুবাইয়ের ল্যান্ডফিলে ফেলা হবে অথবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন দুটি সূত্র। শুধু এই ধ্বংস প্রক্রিয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের খরচ হবে আরও ১ লাখ ডলার। আর এই বিষয়টি মেমোতে উল্লেখ আছে এবং তিনটি সূত্র তা নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন জানুয়ারিতে ইউএসএআইডি বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এরপর গত মে মাসে রয়টার্স জানায়, এর ফলে বিশ্বজুড়ে ৬০ হাজার টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা আটকে পড়ে বিভিন্ন গুদামে।

দুবাইয়ে আটকে পড়া খাদ্য সহায়তা ছিল পুষ্টিসমৃদ্ধ গমের বিস্কুট, যা রান্নার সুযোগ না থাকলে জরুরি পুষ্টির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়— বিশেষ করে শিশু ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, এ ধরনের বিস্কুট দ্রুত খাওয়ানোর উপযোগী ও ক্যালোরি-সমৃদ্ধ।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন বলেন, এই বিষয়টি গত মার্চ মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে জানানো হয়েছিল। মে মাসে রুবিও কংগ্রেসকে আশ্বস্ত করেন যে, কোনো খাদ্য সহায়তা নষ্ট হবে না।

কেইনের প্রশ্ন, “সরকারকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছিল— এই খাবার ২৭ হাজার ক্ষুধার্ত শিশুর জীবন বাঁচাতে পারে। তাহলে কেন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, গুদাম তালাবদ্ধ রাখা হবে, খাবারের মেয়াদ পার হয়ে যাবে, তারপর তা পুড়িয়ে ফেলা হবে?”

রিগাস জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখনও বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তাদানকারী দেশ এবং তিনি এ ঘটনার প্রকৃত তথ্য বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোট ৬১ বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তা দিয়েছে, যার অর্ধেকেরও বেশি এসেছিল ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে।