রবিবার , ২৪শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১লা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

২৬ রমজানের পর ঢাকা সিটিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ৬ জুলাই, ২০১৮

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০১৮ ইং

সজিব আহমেদ বৃহস্পতিবার সকালে গরুর গোসত কিনতে যান রাজধানীর ফকিরাপুল কাঁচাবাজারে। সেখানে প্রতিকেজি গরুর গোসত বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী সজিব আহমেদ গত ১২ জুন, মঙ্গলবার একই বাজার থেকে ৪৫০ টাকায় গরুর গোসত কিনেছেন। সেদিন প্রত্যেকটি দোকানে ‘দেশি গরুর গোসত কেজি ৪৫০ টাকা’ লেখা মূল্য তালিকা ঝোলানো দেখা গেছে। কিন্তু আজ সেই মূল্য তালিকাও নেই কোনো গোসতের দোকানে। কিন্তু হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঈদকে সামনে রেখে। এ যেন দেখার কেউ নেই?

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ফকিরাপুল কাঁচাবাজারে ঢাকা ম্যাক্সের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ওই ক্রেতা এভাবেই জানালেন তার ক্ষোভের কথা।
মাত্র একদিনের ব্যবধানে কী কারণে কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দাম বেড়েছে গোসতের? প্রশ্ন করতেই একজন কসাই (গোসত বিক্রেতা) বললেন, ‘২৬ রমজান পর্যন্ত সিটি করপোরেশন আমাদের ৪৫০ টাকায় বিক্রি করতে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সে পর্যন্ত আমরা লাভ-লস যাই হোক ৪৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন আর কমে কোথাও পাবেন না।’

এর অর্থ সিন্ডিকেট করে সবাই এক সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন- এমন প্রশ্ন করতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ওই কসাই।

সেখান থেকে ঢাকা ম্যাক্সের এই প্রতিবেদক যান মতিঝিল এজিবি কলোনির প্রসিদ্ধ কাঁচাবাজারে। সেখানেও একই অবস্থা। ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর গোসত।

আলাপচারিতায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কসাই বলেন, ‘চাঁদ রাতের (ঈদ) আগে একটু দাম বেশি দিবেন না?’ তাই বলে কেজিতে ৭০ টাকা বেশি? তার উত্তর, ‘ভালো খেলে দাম তো বেশি দিবেনই।’ তাহলে ৪৫০ টাকায় যে গোসত বিক্রি করেছেন এতদিন- তা ভালো গোসত ছিল না? এবার আর কথা বাড়াতে রাজি নন ওই কসাই।

মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচাবাজারে কথা হয় শাহনাজ বেগম (ছদ্মনাম) নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি একটি সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ঢাকা ম্যাক্সেকে তিনি বলেন, ‘এই বাজারে সব সময়ই সব কিছুর দাম বেশি থাকে। এখানে কলোনির হাজার হাজার পরিবারসহ আশপাশের লোকজন কেনাকাটা করেন। বাজারটিও ফুটপাথ দখল করে গড়ে ওঠা, যা অবৈধ। এর পর দরদামের কোনো ঠিক থাকে না। কিন্তু সিটি করপোরেশন এখানে কখনোই অভিযানও চালায় না।’

এখানে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট নিয়মিত চাঁদা আদায় করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে মগবাজার এলাকায়ও ৫০০ টাকা কেজিদরে গরুর গোসত বিক্রি হচ্ছে। মগবাজার এলাকার বাসিন্দা সজল মিয়া জানান, ‘৫০০ টাকা করে সকালে ৭ কেজি গোসত কিনেছি। তবে ৭ কেজিতে ১০০ টাকা কম রেখেছে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, কারওয়ান বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। ৫০০ টাকার নিচে এখন আর কোথাও গরুর গোসত মিলছে না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা জাকির হোসেন ঢাকা ম্যাক্সেকে বলেছেন, ‘মূলত ২৬ রমজান পর্যন্ত গোসতের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। গত বছরও সেটা ছিল। এবার তাই করা হয়েছে। এর পর সিটি করপোরেশন বাজার মনিটরিং করে না’ বলে স্বীকার করেন তিনি। তাহলে এখন বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব কার- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাক্সের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা-১ মো. মোস্তফা কামাল মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘২৬ রমজান পর্যন্ত আমরা সিটি করপোরেশন থেকে দাম নির্ধারণ করে দিয়ে ছিলাম। সে পর্যন্ত আমরা মনিটরিং করেছি। এখন আমাদের করার কিছু নেই। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আছে। তারা এখন দেখবে।’

তবে শুধু গরুর গোসতই নয়, ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগী ও মাছের দামও বেড়েছে ঈদের আগে। সাদা ব্রয়লার এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা কেজিদরে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকার মধ্যে। এছাড়া সাদা লেয়ার ১৮০, লেয়ার (লাল) মুরগী ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি মুরগী প্রতি পিস (সাইজ অনুযায়ী) ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ৫৫০ টাকার নিচে রাজধানীর বাজারে কোনো চিংড়ি মাছ মিলছে না। অন্য মাছের দামও আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে কোথাও কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি এদিন।

অনলাইন ডেস্ক