বৃহস্পতিবার , ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৩ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে স্মৃতি হারিয়ে ফেলা সেই ফুটবলার

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫

২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের কথাটা এখনো হয়ত অনেকের স্মৃতিতেই উজ্জ্বল। লিওনেল মেসির স্বপ্নভঙ্গ, গঞ্জালো হিগুয়েইনের অবিশ্বাস্য মিস, শেষ সময়ে এসে মারিও গোটজের নায়ক হয়ে যাওয়া, সবই হয়ত এখনো মনে রেখেছে ফুটবলের দুনিয়াটা। তবে হারিয়ে গিয়েছেন একজন। যার নাম ক্রিস্টোফ ক্রেমার। এবারের গল্পটা তাকে নিয়েই।

ক্রিস্টোফ ক্রেমারের অভিষেক হয়েছিল ২০১৩ সালে। প্রতিভাবান সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। তবে যে দলে সামি খেদিরা, টনি ক্রুস, বাস্তিয়ান শোয়েইন্সটাইগার কিংবা মেসুত ওজিলের মতো তারকাদের ছড়াছড়ি, সেখানে ক্রেমারের মতো কারো জায়গা করে নেয়া কঠিন। আর আসলেও তাই হয়েছিল। ২৩ জনের স্কোয়াডে থাকলেও ক্রেমারের সৌভাগ্য হয়নি নিয়মিত একাদশে আসার।

ক্রিস্টোফ ক্রেমার সুযোগ পেয়েছিলেন একেবারে ফাইনালে এসে। সামি খেদিরার ইনজুরির সুবাদে ফাইনালের একাদশে ঢুকতে পেরেছিলেন ক্রেমার। তবে সেটাও সুখকর হয়নি। উল্টো ফাইনালের মাঠেই স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। ছাড়তে হয়েছে মাঠও।

কী হয়েছিল সেদিন ক্রেমারের সঙ্গে?

ম্যাচের ১৯ মিনিটে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার এজিকিয়েল গ্যারাইয়ের সঙ্গে সংঘর্ষে মাঠেই পড়ে যান ক্রেমার। প্রাথমিক শুশ্রুষার পরেই আবার উঠে দাঁড়ান তিনি। বিপত্তি বাধে এরপরেই। রেফারি নিকোলা রিজ্জলিকে গিয়েই তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ম্যাচটি বিশ্বকাপের ফাইনাল কি না? রিজ্জলি প্রথমে মজা ভেবে নিলেও পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছিলেন বিষয়টি মজা ছিল না।

পরবর্তীতে রিজ্জলি নিজেই বিষয়টি বাস্তিয়ান শোয়েইন্সটাইগারের কাছে বলেন। সেখান থেকেই কোচ জোয়াকিম লো-কে জানানো হয় ক্রেমারের স্মৃতিভ্রমের বিষয়টি। ম্যাচের ৩১ মিনিটেই বদলি করা হয় এই মিডফিল্ডারকে।

এরইমাঝে ফিলিপ লামের কাছ থেকে ক্যাপ্টেন্স আর্মব্যান্ড নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন ক্রেমার। দলের মিডফিল্ডার থমাস মুলারকে ১৯৭৪ বিশ্বকাপের জার্ড মুলার ভেবেও ভুল করছিলেন তিনি। মূলত গ্যারাইয়ের সঙ্গে সংঘর্ষ এতটাই তীব্র ছিল, কিছু সময়ের জন্য স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছিলেন এই মিডফিল্ডার। বিশ্বকাপ জিতলেও নিজে যে সময়টা মাঠে ছিলেন, তার স্মৃতি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেন ক্রেমার।

ক্রেমার নিজে কী বলেছিলেন?
ক্রেমার এরপর স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলেন কোনো জটিলতা ছাড়াই। কেবল বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রথমার্ধের স্মৃতিটাই হারিয়ে গিয়েছে তার জীবন থেকে। ফাইনালের বেশ কিছুদিন পর ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানে ক্রেমার বলেছিলেন এভাবে,

‘আমি খেলাটির খুব বেশি কিছু মনে করতে পারছি না। প্রথমার্ধের কিছুই আমার মনে নেই। পরে আমি ভেবেছিলাম যে ঘটনাটির পরপরই আমি মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আমি ড্রেসিং রুমে কীভাবে পৌঁছালাম, সেটাও জানি না। আমার মাথায় খেলাটি কেবল দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই শুরু হয়েছে।’

ক্রেমারকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল ৩১ মিনিটে। তার বদলে সেদিন নেমেছিলেন আন্দ্রে শুরলা। যিনি পরে মারিও গোৎজের বিশ্বকাপ জেতানো গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন। কাকতালীয়ভাবে শুরলার নিজের ক্যারিয়ারটাও বড় হয়নি এরপর। একটা সাধারণ ডিনার আইটেমের কারণে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় তার।

ক্রেমারের ফুটবল ক্যারিয়ার কেমন ছিল?
বিশ্বকাপ জেতার পর স্বাভাবিক নিয়মেই ক্লাব ফুটবলে ফেরেন ক্রেমার। বুরুশিয়া মানশেনগ্লাডবাখের খেলোয়াড় ছিলেন। সেই ক্লাবেই যোগ দেন। ২০১৫ সালে চলে যান বায়ার লেভারকুজেনে। এক বছর পর ফের মানশেনগ্লাডবাখে ফেরেন ক্রেমার। ছিলেন ২০২৪ সাল পর্যন্ত।

বর্তমানে ক্রেমার কোনো ক্লাবের সঙ্গেই চুক্তিবদ্ধ নেই। ৩৪ বছর বয়সে তিনি ফ্রি এজেন্ট। সবশেষ খেলেছেন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বোখুমের বিরুদ্ধে ম্যাচে। সেদিনও মাঠে ছিলেন কেবল ৮ মিনিট। এরপর থেকে ক্লাবের বেঞ্চে থাকলেও কখনোই মাঠে খেলা হয়নি। সবশেষ বেঞ্চে ছিলেন গত বছরের মার্চের ৩০ তারিখে।

জার্মানি জাতীয় দলেও ক্রেমারের অধ্যায়টা বড় হয়নি। ২০১৪ সালে ৬ ম্যাচের পর ২০১৫ সালে ২ আর ২০১৬ সালে ৪ ম্যাচে ছিলেন জাতীয় দলে। ইউরো কোয়ালিফায়ারের ম্যাচ খেলেই ছিটকে যান জাতীয় দলের রাডার থেকে। এরপর থেকে আর কখনোই ফেরা হয়নি জার্মানির সাদা জার্সিতে। সব মিলিয়ে মাত্র ১২ ম্যাচ খেলেছেন জার্মানির জার্সিতে।

ক্রেমারের উত্থানটা ছিল সম্ভাবনাময়। কিন্তু একটা সংঘর্ষের পর ক্রেমার নিজে হারিয়ে ফেলেছেন তার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার মুহূর্তটা। এরপর বাকি বিশ্বও আর মনে রাখেনি তাকে। স্মৃতির জটিলতায় ক্রেমারের মতো ভুগেছে ফুটবলের পুরো বিশ্বও।