বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনার ফ্র্যাঙ্কেস্টাইন স্টাইলে কর্তৃত্ববাদী শাসক থেকে ফ্যাসিবাদী শাসকে পরিণত হওয়ার জন্য আমরাও কম দায়ী নই। এদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সবকিছু দেখেও চুপ ছিল।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশ নেওয়া নারীরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীদের মতো হারিয়ে যেতে বসেছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নারী বিভাগের উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের সম্মাননা প্রদান ও সংবর্ধনার জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আমি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে থেকে পত্র পত্রিকায় লিখেছি, টকশোতে কথা বলেছি। তখনই আমি বলেছিলাম, শেখ হাসিনা একটি ফ্র্যাঙ্কেস্টাইন শাসন চালু করতে চলেছে। এই যে শেখ হাসিনা একটি কর্তৃত্ববাদী শাসক থেকে ফ্যাসিবাদী শাসকে পরিণত হলো এর জন্য আমরাও কম দায়ী নই। এদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সবকিছু দেখেও চুপ ছিল।
তিনি বলেন, এতো হত্যা, গুম, খুনের পর তথাকথিত বন্ধুরাষ্ট্র হাসিনা ও তার দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে। শুধু আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি এখন তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন এই গণঅভ্যুত্থানের পরও অনেক মানুষ ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত, সরকারি নানা সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট কিন্তু আন্দোলনের সেই অগ্নিকন্যারা আমাদের মাঝ থেকে নীরবে সরে যাচ্ছে।
এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনারের সভাপতিত্বে ও নারী বিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু , চিকিৎসক ডা. সানজিদা আক্তার প্রমুখ।
গণঅভ্যুত্থানে নারীদের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফ্যাসিবাদ পতন আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা, আমাদের মায়েরা, বোনেরা কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল করেছে। আমি দীর্ঘ সময় ধরে শহীদদের পরিবারের অনুভূতি শুনছিলাম, ডাক্তার বোনদের বক্তব্য শুনছিলাম। এগুলো আমাদের শুনতে হবে, বুঝতে হবে, কীভাবে একটি স্বৈরাচারী ফ্যাসীবাদের পতন হয়েছিল। দেশের মানুষ মুক্তির নেশায় কতটা ত্যাগ করেছিল।
তিনি গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান।
একটি স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি পেল। আজ একবছর পর আমরা কী পেলাম, এমন প্রশ্ন রেখে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সানজিদা আক্তার বলেন, এতো কিছুর পর দেশের মানুষ কিংবা আমরা কি পেলাম? যত পরিবর্তন বা সংস্কারের বক্তব্য আমরা শুনলাম তা আজ কতদূর?
তিনি বলেন, এত নারী আন্দোলনে অংশ নিলো, দেশ গড়ার এই সময় এসে তারা আজ কেন নিবৃত? নারীদের সম্মান ব্যতীত একটি দেশ কল্যাণকর রাষ্ট্র আকারে গড়ে উঠতে পারে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর মিনার বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ডাক্তার সানজিদা, পারশা যে ভূমিকা রেখেছেন তা অনন্য। আমরা আন্দোলনের সময় শত শত মানুষকে শুধু হাসপাতালে যেতে দেখেছি, সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার পরিবেশও ছিল না। তৎকালীন স্বৈরাচার লাশ গণকবর দিয়েছে, আহত, নিহতের কোনো হদিস করা সম্ভব হয়নি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুর নিরভানা বৃষ্টি, শহীদ নাঈমার মা আইনুন নাহার, শহীদ সুমাইয়া আক্তারের মা আসমা বেগম, শহীদ শাহীনুর বেগমের মেয়ে খাদিজা বেগম , শহীদ নাসিমা আক্তারের বোন কোহিনূর বেগম।