বাবা-মাকে নিয়ে বোস্টনের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার ইচ্ছা ছিল বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী শাশ্বত সৌম্যের। কিন্তু সেই ইচ্ছা অপূর্ণ রেখেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি।
সোমবার (স্থানীয় সময়) সকালে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কেলৌনা ক্যাম্পাসের পাশের ওকানাগান লেক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে কানাডার আরসিএমপি। মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধমূলক তৎপরতা বা কারো সংশ্লিষ্টতা তারা খুঁজে পায়নি।
শাশ্বত সৌম্যর মা শিখা চক্রবর্তী সেই মুহূর্তে ছিলেন আমেরিকার বোস্টনে ছেলের বাসায়। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। শিখা চক্রবর্তী এক সময় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে সেখানে শিক্ষকতাও করেন। সর্বশেষ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন, অবসর নেন গত বছর সেপ্টেম্বরে।
তার ভাই সুজিত চক্রবর্তী বলেন, মৃত্যুর আগের রাতেই মা শিখাকে ফোন করে সৌম্য বলেছিল, “তুমি এখন অবসরে, দেশে তেমন কিছু নেই। বাবা আর ভাইকে নিয়ে আমার কাছে চলে এসো। দুদিন পর বিখ্যাত সব জায়গায় নিয়ে যাব।” কিন্তু সেই সফর আর হলো না।
বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ৪.০০ স্কেলে ৪.০০ জিপিএ পেয়ে স্নাতক শেষ করেন সৌম্য। এরপর কয়েক মাস শিক্ষকতা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে, তারপর বুয়েটে। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। এমআইটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে যুক্ত হন এবং তিন বছরের মাথায় তা শেষ পর্যায়ে নিয়ে যান। সম্প্রতি তিনি অংশ নেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে, যেখানে তার রিসার্চ নিয়ে বক্তৃতা দেন এবং কাজের প্রস্তাব পান।
তবে কনফারেন্সের পরেই ফেসবুকে একটি দীর্ঘ হতাশাজনক পোস্ট দেন শাশ্বত সৌম্য। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা, ন্যায় ও সমতার আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। লেখেন, “The great American dream is dead!”
“মানুষ, সঠিক সিদ্ধান্ত নাও। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের আকর্ষণ হারাচ্ছে—বিশেষ করে তাদের কাছে যারা শুধু গবেষণা আর কাজ দিয়ে দুনিয়াকে বদলাতে চায়।”
তার এই পোস্টের ক’দিন পরই আসে তার মৃত্যুর সংবাদ।
শিক্ষাজীবনে সৌম্য ছিলেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও নটরডেম কলেজের ছাত্র। ছোটবেলায় গান পছন্দ করতেন, বুয়েট ‘মূর্ছনা’ আর নটরডেম কালচারাল ক্লাবে যুক্ত ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও রাখেন সক্রিয় উপস্থিতি।
তার সহপাঠীরা বলছেন, “এই মৃত্যু শুধুই একজন মেধাবীর মৃত্যু নয়, এটি তরুণ প্রজন্মের ভেতরে জমে থাকা হতাশা, সামাজিক অনিশ্চয়তা এবং বৈষম্যের প্রতীক।”
বুয়েট শিক্ষক মাহমুদুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, সৌম্যর শূন্যতা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। তার মতো একটি প্রতিভা আমরা আর ফিরে পাব না।