রবিবার , ২৪শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১লা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

‘হঠাৎ বিকট শব্দ, দৌড়ে গিয়ে দেখি বাড়ির ভেতরে আগুন আর কান্নাকাটি’

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়েছেন দুই পরিবারের ৯ জন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধদের শরীরের ৩০ থেকে ৫৩ শতাংশ অংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। বর্তমানে তারা ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।

গতকাল শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাত সাড়ে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ১ নম্বর ওয়ার্ডের রনি সিটি আবাসিক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী এরশাদুল মিয়া তখন পাশের গোডাউনে কলা নামাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দ হলো। দৌড়ে গিয়ে দেখি বাড়ির ভেতরে আগুন আর কান্নাকাটি। কয়েকজন মহিলার শরীর ও কাপড় পুড়ে গিয়েছিল। একটি শিশুর অবস্থা ছিল ভয়াবহ। দৃশ্যটি দেখে শরীর শিউরে উঠেছিল। প্রতিবেশীদের সহায়তায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এরশাদুল মিয়া বলেন, বাড়ির অবস্থা ছিল ভয়ঙ্কর। ওপরের টিন উঠে গেছে। প্লাস্টিকের চেয়ার গলে গেছে। ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল জুতো, বাচ্চাদের খেলনা আর পোড়া আসবাব। আগুনের তাপে প্রায় সব প্লাস্টিক দ্রব্য গলে গিয়েছিল।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, হাসান (৩৭) ৪৪ শতাংশ, সালমা (৩০) ৪৮ শতাংশ, আসমা (৩৫) ৪৮ শতাংশ, তিসা (১৬) ৫৩ শতাংশ, জান্নাত (৪) ৪০ শতাংশ, মুনতাহা (১১) ৩৭ শতাংশ, ইমাম (৪ মাস) ৩০ শতাংশ এবং আরাফাত (১৩) ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও তনজিল ইসলামকে (৪০) প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সার্জন ডা. সুলতান মাহমুদ শিকদার জানান, শিশুসহ আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেবল তনজিল ইসলামকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আদমজী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. মিরণ মিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- ফ্রিজের কম্প্রেসারে শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দগ্ধ কাউকে পাইনি। স্থানীয়রা আগেই তাদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

প্রতিবেশী রুবেল হোসেন বলেন, ভেতর থেকে শিশুদের কান্না শোনা যাচ্ছিল। জানালার পাশে হাত নাড়তে দেখেছি। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি। সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসছে।

আগুনে পোড়া টিনশেড ভাড়া বাড়িটি এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ। ছাইয়ের মধ্যে পড়ে আছে শিশুদের জুতা, গলে যাওয়া প্লাস্টিকের খেলনা আর পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্র। যেখানে এক সময় সংসারের হাসি-খুশি ছিল, সেখানে এখন শুধু পোড়া দেয়াল আর শোকের নীরবতা।