বৃহস্পতিবার , ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৮ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮

 

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রমনা রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সম্মুখে বজ্রকণ্ঠে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের নিগড় থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের মধ্যেই সেদিন সূচিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান। সেদিন কৃষক-শ্রমিক-মজুর-বুদ্ধিজীবী-শিশু-কিশোর-নারী-পুরুষ-যুবক-বৃদ্ধ সবাই সমবেত হয়েছিল বাঙালির মহান নেতার কথা শোনার জন্য। সবার মনে ছিল আকুলতা। সে আকুলতা ছিল নেতার কাছে স্বপ্নের কথা শোনার জন্য। তার মুখে আশার বাণী শোনার জন্য। সে দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই ভাষণটি মঞ্চের সামনে থেকে শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আমি একটি পত্রিকার জন্য রিপোর্ট লিখতে সেখানে গিয়েছিলাম…।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ইতিহাসবিকৃত হওয়া শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাকে এমনভাবে নিয়ে আসা হয়, যেন জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন! তখন আগামী প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য কবিতাটি লেখার তাগিদ অনুভব করি। মনে করি অনাগত কালের শিশুদের কাছে এ কথাটি জানিয়ে দেওয়া দরকার যে, এখন থেকেই, এই পার্কের মঞ্চ থেকেই, বাঙালির অমর অজর প্রিয় শব্দ ‘স্বাধীনতা’ কথাটি উচ্চারিত হয়েছিল। আপামর জনতার সামনে যিনি সেদিন এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি বাঙালির বড় প্রিয় মানুষ, বাঙালির শিকড় থেকে জেগে ওঠা এক বিদ্রোহী নেতা। তিনি কোনো সাধারণ রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন কবি, একজন রাজনীতির কবি। এ দেশের মানুষের ভালোবাসার গড়া এক মানুষ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৮০ সালে আমি ময়মনসিংহে থাকি। তখন ময়মনসিংহে বসে ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটা লিখে ফেললাম। কবিতাটার প্রথম আমি পড়ে শুনালাম আমার বাবাকে। আমার বাবাই এই কবিতাটার প্রথম শ্রোতা। কবিতাটা প্রথম প্রকাশ হয় সচিত্র সন্ধানীতে। কবিতাটা পত্রিকায় লিখে প্রথম ৫০ টাকা সম্মানী পেয়েছিলাম।

আসলে আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল একটি কবিতা। এই ভাষণটি কাব্যসমৃদ্ধ ছিল।
মার্কিন সাপ্তাহিক ‘টাইমস’ পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর ‘পয়েট অব পলিটিকস’ শিরোনামে একটি প্রচ্ছদ স্টোরি করেছিল। এমনকি মার্কিনরাও এ ভাষণ স্টাডি করে তার মধ্যে কবিতার সন্ধান পেয়েছিল। ভাষণটি স্বয়ং একটি কবিতা হওয়ায় তা নিয়ে কবিরা খুব বেশি কোনো কবিতা লেখেননি।

এ ভাষণে ১০৩টি লাইন আছে। ১৯ মিনিট দৈর্ঘ্য। ভাষণটি তিনি এমন চমৎকারভাবে দিয়েছিলেন, প্রথমেই ‘ভায়েরা আমার’ বলে যে সম্বোধন করলেন, মনে হলো, যেন হাজার বছরের বাঙালির যে ভালোবাসার তৃষ্ণা এবং যে প্রত্যয় নির্ভরতা, যার স্বপ্ন দেখেছে সে, সেই নেতা এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছেন। ১০ লাখ লোক একসঙ্গে লাফিয়ে উঠছিল। সব মানুষ যেন আনন্দে উত্তেজনায় একাকার। তাদের নেতার উপস্থিতিতে নিজেদের শক্তির প্রদর্শন করছিল তারা। এটি একটি অবিস্মরণীয় ভাষণ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এ উপলক্ষে গত বছর ১৮ নভেম্বর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজ কণ্ঠে জনসমুদ্রে কবিতাটা পড়েছিলাম। আজ ৭ই মার্চ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কবিতাটা পড়ব।
লেখক : কবি