আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও সরকারের ভেতর থেকে ‘আওয়ামী পুনর্বাসন প্রকল্প’ চালু আছে দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ। বিশেষ করে ‘ডামি রাষ্ট্রপতি’ আবদুল হামিদের দেশত্যাগ এবং চারজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহারকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে।
রোববার (১১ মে) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, গতকাল (১০ মে) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ‘আওয়ামী নেতাদের নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ’ দেওয়া আমাদের উদ্বিগ্ন করে।
তিনি অভিযোগ করেন, ৮ মে রাতে সরকারের গ্রিন সিগনালের পর ‘হত্যা মামলার আসামি’ আবদুল হামিদ দেশ ছাড়েন। অথচ শুধুমাত্র চারজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে মূল অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে। ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর এই চক্রান্তে আমরা লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ।
এ ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এড়াতে পারেন না। তার গাফিলতি ছিল, নাকি সরাসরি সহায়তা-তা তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হোক। তার পদত্যাগই সরকারের ন্যূনতম দায় স্বীকারের প্রকাশ।
‘আওয়ামী পুনর্বাসন’ ও উপদেষ্টাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ
গণঅধিকার পরিষদ অভিযোগ করেছে, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্য আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন পরিকল্পনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
রাশেদ খান বলেন, উপদেষ্টাদের কেউ কেউ ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ ও ডামি এমপিদের পুনর্বাসনে’ সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। এমনকি জাতীয় সংলাপের আগেই করিডোর খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার, ডামি নির্বাচনে সহায়তাকারী ডিসি-এসপি এবং গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমনকারী র্যাব-বিজিবি-পুলিশ সদস্যদের কোনো বিচার করেনি বরং তাদের পুনর্বাসন করেছে। এটা কি আওয়ামী ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার অংশ নয়?
ফ্যাসিবাদ নির্মূলে জাতীয় সরকার দাবি
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শেখ হাসিনার বিদায়ই যথেষ্ট নয়। ফ্যাসিবাদী কাঠামো এখনো বহাল। এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের ফসল, তাই আমাদের রক্ত-ঘাম আর ত্যাগের প্রতিদান স্বরূপ আমরা জাতীয় সরকার গঠন চাই। শুধুমাত্র উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সফলতা সম্ভব নয়।
সংগঠনটি তাদের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছে-
> স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ
> আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল
> আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আওতায় দলটির নেতাদের বিচার
> পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে দ্রুত বিচার সম্পন্ন
> আহতদের পুনর্বাসন, শহীদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং তালিকা প্রণয়ন
> জাতীয় সরকার গঠন ও নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা
গণঅধিকার পরিষদ জানায়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে তারা শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ডিসিদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান, ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিক্ষোভ, ২২ মার্চ গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং ৯ মে পল্টন মোড়ে গণমিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি।
তারা মনে করে, এই দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়ই সরকার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, মাহফুজুর রহমান খান, হাবিবুর রহমান রিজু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলু খান, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন প্রমুখ।