মঙ্গলবার , ১লা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ৩রা শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

স্পেনে বাড়ছে আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

আশ্রয়ের আবেদনে প্রক্রিয়াগত জটিলতা, দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং আশ্রয়ের স্বীকৃতির নিম্ন হার– এই তিন কারণে স্পেনের আশ্রয় নীতিকে “অত্যন্ত কঠোর” আখ্যা দিয়েছে অভিবাসন সহায়ক সংস্থা ও অধিকারকর্মীরা।

মাদ্রিদভিত্তিক অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, স্পেন আশ্রয়ের বদলে এখন শ্রমভিত্তিক অভিবাসনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
সেনেগালের কাসামান্স অঞ্চল থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী ওসমান বলছেন, “আমি যখন এক বছর আগে এখানে আসি, তখনই আশ্রয়ের আবেদন করেছিলাম। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সিদ্ধান্তটা ছিল একদম স্বাভাবিক।”

তার মতো বহু অভিবাসী প্রতি বছর স্পেনে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য আবেদন করেন। শুধু ২০২৫ সালের শুরুতেই জমা পড়েছে ২৬ হাজার ৪০০টিরও বেশি আবেদন, যার বড় অংশ এসেছে ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া ও মালি থেকে।
২০২৪ সালে মোট আবেদন সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৩৬৬, যা স্পেনে আশ্রয় ব্যবস্থা চালুর পর থেকে সর্বোচ্চ। তবে চাহিদা বাড়লেও আবেদন প্রক্রিয়া এখনও সহজ নয়।

ওসমান বলেন, “আমি যখন ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের তেনেরিফে পৌঁছাই, তখনই জানিয়েছি— আমি আবেদন করতে চাই। তখন বলা হয়, এটি মূল ভূখণ্ডে করতে হবে। পরে মাদ্রিদে গেলে আবার বলা হয়— ‘আবেদন করতে হবে তেনেরিফেতেই’। ব্যাপারটা খুব বিভ্রান্তিকর ছিল।”

দীর্ঘ অপেক্ষা ও মানসিক চাপে আবেদনকারীরা
আরেক সেনেগালিজ অভিবাসী আবদুল্লাহ ২০২৪ সালের আগস্টে মাদ্রিদের কাছাকাছি একটি কেন্দ্রে পৌঁছেছিলেন। তিনি জানান, “আমি প্রথম দিনই আবেদন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু জানানো হয়— অনেকেই আগে থেকে অপেক্ষায় আছেন। কিছু না করে সময় কাটানো খুব কঠিন ছিল।”

ছয় মাস পর, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি তার আবেদন জমা দিতে সক্ষম হন।
মাদ্রিদভিত্তিক এনজিও সেয়ার-এর পরিচালক মরিসিও ভালিয়েন্তে বলেন, “আশ্রয় প্রক্রিয়ায় ঢোকাটাই সবচেয়ে কঠিন ধাপ। প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগগুলো চাপে পরিপূর্ণ। অনেক আবেদনকারী এক বছর ঘুরেও কেবল আবেদন জমা দিতেই ব্যর্থ হন।”

আশ্রয়প্রার্থীরা আবেদন জমা দিলেও সুরক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা মেলে না। ২০২৩ সালে স্পেনের আশ্রয় অনুমোদনের হার ছিল মাত্র ১২ শতাংশ— যা ইউরোপে সর্বনিম্ন। ২০২৪ সালে তা সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৫ শতাংশে, যা ইউরোপীয় গড় ৪২ শতাংশের অনেক নিচে।
মরিসিও ভালিয়েন্তে মনে করেন, এই পরিসংখ্যান স্পেনের অত্যন্ত কঠোর আশ্রয় নীতির প্রতিচ্ছবি। সবচেয়ে বেশি প্রত্যাখ্যান পেয়েছেন কলম্বিয়া, পেরু, মরক্কো, সেনেগাল ও হন্ডুরাস থেকে আগতরা। অপরদিকে মালি, ভেনেজুয়েলা, সোমালিয়া ও সুদান থেকে আসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতার হার ছিল ৯০ শতাংশেরও বেশি।

অভিবাসন আইনজীবী আনা আলানিওন বলেন, “যুদ্ধ বা সহিংসতা ছাড়া আবেদন গৃহীত হয় না। নিপীড়ন বা বৈষম্যের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব কমই গুরুত্ব পায়।”

কমপ্লুতেন্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এলিসা ব্রেয় বলেন, “স্পেন কখনোই সুইডেন বা জার্মানির মতো শরণার্থীভিত্তিক দেশ ছিল না। বরং দেশটি বরাবরই শ্রমের ভিত্তিতে অভিবাসনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৭৫ পর্যন্ত স্পেন ছিল একনায়কতান্ত্রিক। এরপর ৯০ দশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিয়ে আশ্রয় আইন বাধ্যতামূলক হয়।”

যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তাদের জন্য ‘আরাইগো’ নামে একটি বিশেষ রেসিডেন্স পারমিট রয়েছে। তবে এর জন্য স্পেনে কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর অনিয়মিতভাবে থাকার প্রমাণ দিতে হয়।

২০২৫ সালের ২০ মে থেকে চালু হচ্ছে ‘আরাইগো দে লা সেগুন্ডা ওপোরতুনিদাদ’— একটি নতুন রেসিডেন্স পারমিট, যা মূলত আশ্রয় প্রত্যাখ্যাতদের জন্য তৈরি। মরিসিও ভালিয়েন্তে বলেন, “এই বিকল্পগুলো আশার আলো দেখায়। কিন্তু সমস্যা হলো, আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যে সময়টা কাটে, সেটি ‘আরাইগো’র আওতায় গণনা করা হয় না।”

যেসব দেশের আবেদন দ্রুত গৃহীত হয়, তাদের অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন।
মালি থেকে আগত ফোফানা জানান, “আমি কখনোই রাস্তায় ঘুমাইনি। সেভিয়া ও মাদ্রিদের কেন্দ্রে ছিলাম। ২০২৩ সালের আগস্টে রিফিউজি স্ট্যাটাস পাই। এখন আমি স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছি। স্পেন আমি কখনও ছাড়ব না।” ইনফোমাইগ্রেন্টস