স্ত্রীকে অচেতন করে অন্য পুরুষ দিয়ে ধর্ষণ, ২০ বছরের দণ্ড স্বামীর
ফ্রান্সে স্ত্রীকে অচেতন করে অন্য পুরুষ দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে ডোমিনিক পেলিকোত নামের এক ব্যক্তিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। প্রায় এক দশক ধরে অমানবিক এই নির্যাতন চালানোর ঘটনায় ডোমিনিকের সহযোগী অন্য ৫০ জনকেও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আভিগননের একটি আদালতের বিচারক বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলেছে, ৭২ বছর বয়সী ডোমিনিক পেলিকোতকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ মেয়াদের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। এ সময় রায় শুনে আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ডোমিনিক।
এই মামলায় ডোমিনিক ছাড়াও অন্য ৫০ জন পুরুষের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেককে ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে তাদের কারাদণ্ডের মেয়াদ প্রসিকিউটরদের দাবির তুলনায় কম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গিস লে পেলিকোতের স্বামী ডোমিনিক পেলিকোত তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করতেন। এরপর অন্য পুরুষদের দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করাতেন তিনি। প্রায় এক দশক ধরে স্ত্রীর ওপর এই অমানবিক নিপীড়ন চালিয়েছেন তিনি। গিস লের সঙ্গে এমন ভয়ানক ও অমানবিক ঘটনা ৯২ বার ঘটেছে। ৭২ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেন।
আদালতে বিচারক রায় পড়ার সময় গিস লে ও তার সন্তানদের আবেগহীন দেখা যায়। এ সময় তারা মাঝে মাঝে আসামিদের দিকে তাকান এবং দেয়ালে মাথা রাখেন। এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের সর্বকালের বৃহত্তম ধর্ষণ মামলার অবসান ঘটে। ফ্রান্সের পাশাপাশি বিশ্বকেও হতবাক করেছে। আলোচিত মামলাটির বিচার কাজ চলেছে গত তিন মাস ধরে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ডোমিনিক অনলাইনে এসব পুরুষ ঠিক করতেন। অভিযুক্ত পুরুষদের মাঝে তরুণ, বৃদ্ধ, মোটা, পাতলা, কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গসহ বিভিন্ন শ্রেণিপ্রেশার মানুষ আছেন।
রায়ের পর আদালতের বাইরে কথা বলার সময় ৭২ বছর বয়সী গিস লে পেলিকোত বলেন, এই বিচারের পর্বটি ‘‘অত্যন্ত কঠিন অগ্নিপরীক্ষা’’ ছিল। তবে তিনি বিচার কার্যক্রম সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ‘‘কখনও অনুশোচনা বোধ করেননি’’; যাতে কী ঘটছে তা সমাজ দেখতে পারে, বলেন গিস লে।
বিচার চলাকালীন গিস লের নিজের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করার স্বয়ংক্রিয় অধিকার পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, যা ছিল অত্যন্ত অস্বাভাবিক। তিনি চাইলে নাম গোপন রেখে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারতেন। তা না করায় ফ্রান্সের পাশাপাশি বিশ্ব গণমাধ্যমও দীর্ঘদিন ধরে এই মামলার কার্যক্রমের সংবাদ পরিবেশ করে। রায় ঘোষণার সময় বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের শত শত সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
গত সেপ্টেম্বর থেকে আভিগননে শুরু হওয়া বিচারিক কার্যক্রমে প্রায় প্রত্যেক দিনই অংশ নেন গিস লে। তার ৫০ বছরের স্বামীর মতো একই আদালতে হাজির হন গিস লে; যাকে তিনি বর্তমানে তালাক দিয়েছেন।
গিস লে পেলিকোত মামলা বিচার চলাকালীন পাশে দাঁড়ানোয় সমর্থকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পুরুষ ও নারীরা পারস্পরিক শ্রদ্ধায় বসবাস করতে পারবেন, এমন ‘‘উন্নত ভবিষ্যতের’’ বিষয়ে আস্থা আছে তার।
বৃহস্পতিবার আদালতে ডোমিনিক পেলিকোত নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। পরে স্ত্রীকে অন্য পুরুষ দিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
ডোমিনিক পেলিকোতের সঙ্গে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন জ্যঁ পিয়েরে মারেচাল। মারেচালকে ডোমিনিক ‘‘শিষ্য’’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ তিনিও বছরের পর বছর ধরে তার নিজের স্ত্রীকে মাদক সেবন করে ধর্ষণ করেছিলেন। ডোমিনিককেও একই কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মারেচাল; তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলায় ডোমিনিক পেলিকোতকে তার মেয়ে ক্যারোলিন ডারিয়ান ও পুত্রবধূ অরোর এবং সেলিনের অশালীন ছবি তোলার জন্যও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালতে ছিলেন ক্যারোলিনও। বিচারের আগে তিনি বলেছিলেন, তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে যাওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তার ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছিল তার কোনও রেকর্ড নেই। তবে ডোমিনিক মাদক গ্রহণ ও নিজ মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।