প্রায় এক বছর ধরে কোমরে ব্যথা ও পেশিতে খিঁচুনি (muscle spasm) রোগে আক্রান্ত আরিফা বেশিক্ষণ বসে থাকতে না পারায় লেখাপড়া করেন শুয়ে থেকে। এবারের এসএসসি পরীক্ষার সময় কখনো বসে কখনো শুয়ে পরীক্ষা দেন। কয়েকদিন অ্যাম্বুলেন্সে করেও খুলনা জিলা স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হয়েছে তাকে। খুলনার সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। শুয়ে-বসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েও পেয়েছেন জিপিএ-৫। বাবা আতিয়ার রহমান আনসার সদস্য এবং মা সুলতানা পারভীন গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে বড় আরিফা। ছোট বোন আশরাফি আল শোভা এবার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকার একটি কোয়াটারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন তারা।
মেধাবী শিক্ষার্থী আরিফা এসএসসিতে জিপিএ- ৫ পেলেও অর্থাভাবে তার চিকিৎসা ও পরবর্তী লেখাপড়া নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসে খুলনা ব্লাড ব্যাংক এবং গণমাধ্যমের কর্মীরাও।
এদিকে, গত ১৩ মে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘তবুও জিপিএ-৫ পেয়েছে আরিফা’ শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে আরিফাকে নিয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি নজরে এলে আরিফাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন মানবিক ব্যক্তিরা। বিভিন্ন স্থান থেকে আরিফার জন্য সহযোগিতা আসে ৩ লাখ টাকা। আর আজ সোমবার রোটারী ক্লাব অব মতিঝিল শাখার নেতারা খুলনায় আরিফার বাড়িতে এসে চার লাখ টাকার চেক তুলে দেন আরিফা ও তার মায়ের হাতে।
রোটারী ক্লাব অব মতিঝিল শাখার সাবেক সভাপতি আব্দুস শাকুর চৌধুরী বলেন, সংবাদটি নজরে আসার পর আমি আত্মীয়ের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিতে শুরু করি। বিষয়টি জানার পর আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না। পরবর্তীতে রোটারী ক্লাব অব মতিঝিলের উদ্যোগে সব সদস্য একত্র হয়ে ৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করি। আশা করি এই অর্থ তার চিকিৎসায় সহযোগিতা হবে।
তিনি বলেন, এমন মেধাবী শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে এটা আমরা মানতে পারিনি। তাই আমরা এই টাকা নিয়ে এসেছি। খুলনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজার মাধ্যমে এসে আরিফার পরিবারের নিকট চেক হস্তান্তর করেছি। এই ধরনের সংবাদ গণমাধ্যমগুলো প্রচার করলে এবং জানতে পারলে আমরা সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারি। সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ করব এ ধরনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য। এই মেধাবী শিক্ষার্থী অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিয়েও জিপিএ-৫ পেয়েছে। এমন মেধাবী শিক্ষার্থীকে আমরা সমাজ থেকে মুছে যেতে দিতে পারি না। আশা করি আল্লাহ তাকে রহম করবেন এবং সে সুস্থ হয়ে লেখাপড়া শুরু করবে।
এক বছরের ব্যবধানে কোমর ব্যথার অসুস্থতা কেড়ে নিয়েছে আরিফার জীবনের দুরন্তপনা। গত বছরও স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৪০০ মিটার দৌড়ে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছে এই মেধাবী শিক্ষার্থী। অথচ বছর ঘুরতেই বাড়ির বিছানায় শুয়ে-বসেই দিন কাটছে তার।
আরিফা জান্নাত আসফি বলে, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে। এই অর্থ পেয়ে ভরসা পেয়েছি যে আমার চিকিৎসা হবে। ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাব আমি। আমি খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে ভর্তি হব। দুই বছর পরে এইচএসসি পরীক্ষা। এরপর অ্যাডমিশন পরীক্ষা। সর্বোচ্চ চেষ্টা করব লেখাপড়া করার। আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার।
আরিফা জান্নাত বলে, সাংবাদিকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন আমার অসুস্থতা এবং পড়াশোনার বিষয়ে। তারপর সবাই এগিয়ে আসছেন, সবাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসার অর্থ জোগাড় হয়ে গেছে। আজকে যারা সহযোগিতা করলেন তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব। ভবিষ্যতে আমি সবার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
আরিফার মা সুলতানা পারভীন বলেন, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে সবাই এগিয়ে আসছে। যারা আমার মেয়েকে সহযোগিতা করেছেন, আল্লাহ তাদের সকলের ভালো করুক। মেয়ের চিকিৎসার টাকা সংগ্রহ হয়ে গেছে এটা কেমন লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। খুবই ভালো লাগছে। চিকিৎসার জন্য চলতি মাসের শেষের দিকে ভারতে যাব ইনশাআল্লাহ। আমার মেয়ের চিকিৎসা হবে, সবাই দোয়া করবেন। সে যেন আগের মতো সুস্থ হয়ে জীবন-যাপন করতে পারে।