সোমবার , ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সাভারে ওয়াসিল উদ্দিন গণপাঠাগারের উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা):  সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হেমায়েতপুর এলাকায় প্রয়াত সাংবাদিক ওয়াসিল উদ্দিন গণপাঠাগারের উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে হেমায়েতপুরের জয়নাবাড়ি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত এক অনারম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এই মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম মোল্ল্যাসহ প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাদ্দাম হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আজকে আমরা সবাই যে মাতৃভাষায় কথা বলি এই ভাষা আপন করে পেতে আমাদের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করতে হয়েছে। প্রভাতফেরি অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে হয়েছে। জোর করে অন্যের ভাষা আমাদের মাতৃভাষা বানানোর প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে আন্দোলন করতে হয়েছে আর এসকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান আমলে অনেক অপ্রাসঙ্গিক বই আমাদের শিক্ষার্থীদের উপর পাঠ্যপুস্তক হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল- যার সাথে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার কোন সম্পর্ক ছিল না, তার মধ্যে ছিল শুধুই সাম্প্রদায়িকতা। সেসময় শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ও মানসম্মত শিক্ষার অধিকারের জন্য যে সংগঠনটি লড়াই করেছিল সেটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আজকে যে আমরা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করি, সারাদেশে এই গণমুখী শিক্ষা এবং বিনামূল্যে বই সবই আমরা পেয়েছি। এসবের জন্য যুগে যুগে যেই সংগঠনটি লড়াই সংগ্রাম করেছে- সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তাই আজকে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের সামনে কথা বলতে পারা সত্যিই আনন্দের এবং গর্বের।

তিনি আরোও বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানটি সত্যিই অসাধারণ। কারণ গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার বাইরে গিয়ে ভাষা এবং বইয়ের প্রতি ভালোবাসার এমন উদ্যোগ সচরাচর দেখা যায় না। এখানে এসে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কথা যিনি আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন, একটি মানচিত্র দিয়েছেন, তার যেই রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তার যে অদম্য ব্যক্তিত্ব তার যে অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম করার দুর্বার প্রত্যয় সেটি গড়ে উঠেছে বইয়ের সাথে তার আত্মিক নিবন্ধনের কারণে মানুষের সাথে তার নিবিড় সংযোগের কারণে। একজন শেখ মুজিব যখন আমাদের বয়সী ছিল আপনারা যারা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েছেন তারা জানবেন- তিনি যখন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ছিলেন তখন তার খুবই অল্প বয়স তখন তিনি লিখেছিলেন আব্বা সমস্ত খবরের পত্রিকা বাড়িতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছেন। কলকাতা থেকে আনন্দবাজার, মাসিক মোহাম্মদী ও সওগাত পত্রিকা আমাদের বাড়িতে আসত এবং আমি সবগুলো পত্রিকা পড়তাম। ১৪/১৫ বছরের কিশোর বঙ্গবন্ধু সেসময় এতগুলো পত্রিকা পড়তেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে তার পিতা শেখ লুৎফর রহমানের সাথে আলোচনা করতেন। তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আরো লিখেছেন, ১৯৪৯ সালে ২৯ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু কারাবন্দি হয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে চিঠি লিখেছেন- ‘অনেক দিন আপনার সাথে দেখা হয় না। শেষবার যখন জেলগেটে দেখা হয়েছিল তখন বলেছিলেন বই পাঠাবেন এখনো বই পাঠাননি আপনি ভুলে যাবেন না যে জেলের মধ্যে নির্জনতা এবং বই আমার একমাত্র সঙ্গী। জেলের মধ্যে বই পড়ার যে নিবিড় আগ্রহ বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছেন এটি দিয়ে প্রমাণিত হয় একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার জন্য একটি আলোকিত প্রজন্ম তৈরির জন্য কিংবা নিজেকে রিদ্ধ করার জন্য জাতির পিতা কি প্রচণ্ডভাবে চেষ্টা করেছেন।

সাদ্দাম আরো বলেন, এখন আমরা সবাই অনেক ব্যস্ত নিজেদের লেখাপড়া, খেলাধুলা পাশাপাশি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে। তবে আপনারা সবাই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নাম শুনেছেন তিনিও প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় বছরে ৫০টি বই পড়তেন। আমরা তো মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি ব্যস্ত নই, আমাদের তো কোন দেশে যুদ্ধের জন্য সৈন্য পাঠাতে হয় না, যুদ্ধ থামাতেও হয় না। অর্থনৈতিক মন্দাও মোকাবেলা করতে হয় না। তাহলে আমরা কেন বই পড়ার মতো পর্যাপ্ত সময় পাব না? প্রতিটি সফল মানুষ তার জীবনে প্রচুর বই পড়েছেন। বইয়ের মাধ্যমেই আমরা সকল অপসংস্কৃতি থেকে মুক্ত থাকতে পারব।

মেলায় মোট ৪০টি বুক স্টলে সকল ধরনের বইয়ের সমারোহ নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এ বিষয়ে মেলার তত্ত্বাবধান কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, আমরা বিনামূল্যে এখানে বুকস্টল বরাদ্দ দিয়েছি এবং স্টলের বিক্রেতাদের সাথে আলোচনা করেছি যাতে তারা অন্য জায়গার চেয়ে আমাদের মেলায় কমমূল্যে বই বিক্রি করেন।

মেলায় ঘুরতে আসা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া জানান, আমরা আমাদের স্কুলের শিক্ষকদের সাথে মেলায় ঘুড়তে এসেছি আমার খুবই ভালো লাগছে। কারণ আমি বই পড়তে ভালোবাসি।

মেলায় ঘুরতে আসা অপর মাদ্রাসাশিক্ষার্থী আবু বকর তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, আমি ভুতের গল্পের বই পড়তে অনেক পছন্দ করি কিন্তু মাদ্রাসার ছুটির অভাবে ঢাকার বইমেলায় যেতে পারি না। তাই আমাদের এলাকায় এতো সুন্দর একটি বই মেলার আয়োজন করার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আমি এবার বইমেলা থেকে বই কিনতে পারব।

এ ব্যপারে মেলার আয়োজক এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম সমর বলেন, আমার পিতা একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি কর্মজীবনে দৈনিক বাংলার বাণী, ইত্তেফাক ও সর্বশেষ দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। সেই সূত্রে অনেক ছোটবেলা থেকেই বাবা আমাদেরকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন। বিশেষ করে প্রতিদিন রাতে বাসায় ফেরার পথে বাবা সেদিনের পত্রিকাটি সাথে করে নিয়ে আসতেন এবং আমাদের তিন ভাইকে সেই পত্রিকা বাধ্যতামূলক পড়তে দিতেন এবং পড়া শেষে আমাদের প্রত্যেককে পত্রিকার কোন পৃষ্ঠায় কোন কলামে কি লেখা ছিল- সেটি জিজ্ঞেস করতেন। সেই থেকেই বইয়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার প্রয়াত বাবার নামে গড়া এই সংগঠন থেকে বইমেলার আয়োজন করেছি। যার মূল লক্ষ বর্তমান প্রজন্মকে ফেসবুক নামক নেশা থেকে বের করে প্রকৃত বইয়ের মাঝে ফিরিয়ে আনা।