সোমবার , ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২রা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সংগঠনের জমি বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, সেখানে এখন গরুর গোয়াল

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মীপুর উদয়ন সংঘের ১১ শতক জমি গোপনে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঠাকুর, সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানসহ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে। বিক্রির পর বর্তমানে ওই জমিতে গরুর গোয়াল ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

সংগঠনের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে জমি বিক্রির অভিযোগ তুলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেন। তিনি ক্লাবের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত সম্পত্তি বেআইনিভাবে বিক্রির ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্লাবের জমি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।

সংগঠনের কয়েকজন সদস্য জানান, মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকার চাঁদা তুলে লক্ষ্মীপুর উদয়ন সংঘ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে রাস্তার পাশেই সংগঠনের জন্য ১১ শতক জমি ক্রয় করা হয়। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৪৫ জন। অভিযোগ এই সদস্যদের অন্ধকারে রেখে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাত্র কয়েকজন অসাধু সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করে পুরো অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগকারীদের দাবি, এটি একটি রেজিস্ট্রেশনকৃত সম্পত্তি, যা কোনোভাবেই ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা কোনো সদস্যকে না জানিয়ে এবং রেজুলেশনের নামে স্বাক্ষর জাল করে গোপনে বিক্রি করেন। জমিটি বিক্রি করা হয়েছে স্থানীয় মো. মোক্তার হোসেনের কাছে। বর্তমানে সেখানে গরুর গোয়ালঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

মো. আলমগীর হোসেন অভিযোগে আরও জানান, প্রকৃত মূল্য ১০ লাখ টাকা হলেও দলিলে মাত্র ৫ লাখ টাকা দেখানো হয়। বাকি ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া, সংঘের নামে থাকা জমিটি মূলত কবরস্থানের নামে রেকর্ডভুক্ত ছিল, কিন্তু শ্রেণি পরিবর্তন করে ধানী জমি হিসেবে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল বিক্রয় দলিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিক্রেতা হিসেবে স্বাক্ষর করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জমির ক্রেতা মো. মোক্তার হোসেন বলেন, আমি ৫ লাখ নয়, ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। পুরো অর্থ সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদককে দিয়েছি।

এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঠাকুর বলেন, জমি বিক্রির পর জানতে পেরেছি, রেজিস্ট্রিভুক্ত সমাজকল্যাণমূলক সংঘের জমি বিক্রি করা যায় না। এটা আমার ভুল হয়েছে, তবে সংগঠন চাইলে জমি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় আমি সহযোগিতা করব। সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানও জমি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

মহম্মদপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রব জানান, লক্ষ্মীপুর উদয়ন সংঘের জমি বিক্রির বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার নির্দেশে তদন্ত চলমান রয়েছে। বিভাগীয়ভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।