রবিবার , ২৪শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১লা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

শিক্ষা নিয়ে কিছু কথা “দিদারুল ইসলাম”

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩

তিনি বলেন শিক্ষা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করে। ব্যক্তির দেহ-মন-আত্মার বিকাশ ঘটিয়ে আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। মানসিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্ফুটন করে ইন্দ্রিয় জাগ্রত করে। অর্জিত জ্ঞান নিজেকে আত্মপ্রত্যয়ী ও সংস্কারমুক্ত করে তোলে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো চরিত্রের বিকাশ, মানবীয় উত্কর্ষ সাধন করা, সুঅভ্যাস গড়ে তোলা, মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের সন্ধানে অগ্রসর হওয়া। নৈতিক আচরণের উন্মেষ ঘটিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগরিত করা। সার্টিফিকেটনির্ভর লেখাপড়া দেশ গঠনে কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারছে?

আমরা জিপিএ ৫-এর পিছনে ছুটছি। অভিভাবকদের ধারণা সন্তান জিপিএ-৫ পেলেই সে নামকরা হবে খুব। কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যার সার্টিফিকেট আদৌ কি প্রকৃত মানুষ গড়ে তুলতে পারছে? নীতিবিবর্জিত শিক্ষা অর্জন প্রকৃত শিক্ষা নয়। আমি লক্ষ করেছি, যে পাঠ্যপুস্তক থেকে যে জ্ঞান ছাত্রছাত্রীরা অর্জন করছে তা শুধু সার্টিফিকেট বা ভালো একটা চাকরি পাওয়ার আশায়। কিন্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য তা নয়; উপলব্ধি করা জ্ঞান নিজের মধ্যে প্রয়োগ করার নামই প্রকৃত শিক্ষা। নিজেকে জানা নিজের মাঝে আদর্শ মূল্যবোধ তৈরি করে তা সমাজে প্রসারিত করা। বাচ্চাটা হয়তো আরেকটু ঘুমাতে চেয়েছিল কিন্তু ভোর হতে না হতেই বাচ্চাকে প্রস্ত্তত করা হচ্ছে অনেকগুলো বইসহ ব্যাগ কাঁধে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য।

ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে নিয়ে যাচ্ছেন বাধ্য করে। যে সময়টা তাদের হেসেখেলে পার করার বয়স, আমরা চাপিয়ে দিচ্ছি বইয়ের বোঝা। বাস্তবে এতে কি কোনো উপকার হচ্ছে? প্লে নার্সারি কেজি এসব সার্টিফিকেট কীসের প্রয়োজনে আমার বোধগম্য নয়। এতে শিশুদের সুষ্ঠুভাবে মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ যেন আজকাল যন্ত্র হয়ে গেছে। অনুভূতিহীন রোবটে পরিণত হয়েছে। পারিবারিক সম্পর্কগুলো শিথিল হয়ে গেছে। একই পরিবারে থেকে একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সময় পাচ্ছে না। সামাজিক বন্ধনগুলো আগের মতো নেই।

সার্টিফিকেট অর্জন করে আমরা শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, অফিসের বড় কর্মকর্তা হচ্ছি। বিশাল বাড়ি-গাড়ির মালিক হচ্ছি কিন্তু সেখানে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের স্হান হচ্ছে না। তাহলে এই সার্টিফিকেট অর্জনের কী প্রয়োজন? যেখানে মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত শিক্ষা একটা জাতি গঠনে সভ্যতার উত্কর্ষ সাধনে ভূমিকা রাখে। অথচ বর্তমান সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষাব্যবস্হা জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করে তুলছে। প্রতিটি স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি। এর একটাই কারণ আমরা যা শিখছি নিজের মধ্যে ধারণ করছি না। অর্থাৎ প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি না।

সার্টিফিকেটের পিছনে দৌড় দিচ্ছি। আমাদের সুন্দর একটা জাতি উপহার দেওয়ার জন্য প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে হবে। শুরু করতে হবে প্রাথমিক স্তর থেকে। কারণ ভিত্তি স্হাপন যদি মজবুত হয়, তা সহজে ভেঙে যায় না। তাছাড়া নৈতিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। মস্তিষ্কের সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে হবে এবং সেটা ব্যবহার করতে হবে বাস্তব জীবনে। মানবিক মূল্যবোধের বেশি বেশি চর্চা করলে হিংসা, হানাহানি, দুর্নীতি, শ্রেণি বৈষম্য, জাতি ভেদাভেদ দূর হয়ে সুন্দর কল্যাণকর রাষ্ট্র হবে।