পবিত্র রমজানের আগমনের বার্তা নিয়ে আসে শাবান মাস। রাসূল সা.-এর অনুসরণে মুসলমানেরা এই মাস থেকেই রমজানের রোজার প্রস্তুতি নেন। কেউ নফল রোজা রাখেন, কেউ বেশি বেশি দোয়া পাঠ করেন। কেউ এখন থেকেই কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নেন। অনেকেই মন্দ অভ্যাস ছাড়ার চেষ্টা করেন।
শাবান মাসে পবিত্র রমজানের প্রস্তুতির সব থেকে বড় আমল হলো, নফল রোজা রাখা। রাসূল সা. এই মাসে নফল রোজার মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন।
উসামা বিন জায়েদ (রা.) বলেন, আমি প্রিয় রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, হে আল্লাহর রাসুল, শাবান মাসে আপনি যেভাবে রোজা রাখেন, সেভাবে অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে আপনাকে দেখিনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এই মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন এক মাস, যে মাসে বান্দার আমলকে বিশ্বজগতের রব আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার। (নাসাঈ, হাদিস : ২৩৫৭)
শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা একটি উত্তম আমল। তবে এই মাসের শেষার্ধে রাসূল সা. রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেক গত হবে তখন তোমরা আর রোজা রাখবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৭, সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৮)
এই হাদিসটি শাবান মাসের অর্ধেক গত হওয়ার পর অর্থাৎ ১৬ তারিখ থেকে রোজা রাখতে অনুৎসাহিত করে। তবে অন্য হাদিসে এ দিনগুলোতেও রোজা রাখার কথা এসেছে। যেমন আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন—
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা রমজানের একদিন বা দুইদিন আগে রোজা রাখবে না। তবে কারো যদি রোজা রাখার অভ্যাস থেকে থাকে সে ব্যক্তি রোজা রাখতে পারে। (সহিহ বুখারি, হাদিস :১৯১৪, সহিহ মুসলিম, হাদিস :১০৮২)
এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, যে ব্যক্তির নফল রোজা রাখার অভ্যাস রয়েছে, তিনি শাবান মাসের প্রথম অর্ধেক পার হবার পরও রোজা রাখতে পারবেন। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এবং প্রতি মাসে আইয়ামে বিজের রোজা রাখেন অথবা যার একদিন পর পর নফল রোজা রাখার অভ্যাস আছে, তিনি শাবান মাসের প্রমার্ধের পরও রোজা রাখতে পারবেন।
আর যার নিয়মিত নফল রোজা রাখার অভ্যাস নেই তিনি শাবান মাসের প্রথমার্ধের পর রোজা থেকে বিরত থাকবেন। এক হাদিসে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো শাবান মাস রোজা রাখতেন। শাবান মাসের কিয়দংশ ছাড়া পুরো মাসই রোজা রাখতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৭০)
ইমাম নববী রহ. বলেন, আয়েশা (রা.) এর উক্তি ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা শাবান মাস রোজা রাখতেন। গোটা শাবান মাসের কিয়দংশ ছাড়া গোটা মাস রোজা রাখতেন’-র দ্বিতীয় বাক্যটি প্রথম বাক্যের ব্যাখ্যা। গোটা মাসের ব্যাখ্যা হচ্ছে- মাসের অধিকাংশ সময়।
এ হাদিস প্রমাণ করে যে, শাবান মাসের অর্ধেক গত হওয়ার পর রোজা রাখা বৈধ। কিন্তু যে ব্যক্তি আগের অর্ধেকের সাথে পরের অর্ধেক মিলিয়ে রোজা রাখবে তার জন্য। যিনি প্রথম অর্ধেকে রোজা রাখেননি তার জন্য নয়।