পা ঘুরাতে পারলে যাদের পেটের আহার জোটে, একদিনও কি তাদের ঘরে বসে থাকা চলে? তাইতো মেঘ-বৃষ্টি-রোদ-ঝড় উপেক্ষা করেই পথে নামতে হয় তাদের। কখনও দেখা যায় কাঠফাটা রোদে দরদরিয়ে শরীর গড়িয়ে নামছে ঘাম, একটু পরই তা আবার ধুয়ে যাচ্ছে তুমুল বৃষ্টিতে। ভিজা পোষাক গায়েই শুকিয়ে যাচ্ছে ফের। এমন হলে সর্দিকাশি, জ্বর তো আসবেই। কিন্তু পা থামানোর যে সুযোগ নেই।
রিকশাচালকদের এমন কষ্টসাধ্য জীবিকা নির্বাহ আমরা অনেকেই হয়তো হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারিনা। চালকদের কষ্ট একটু হলেও কমাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে নিজেদের পকেটের টাকায় রিকশাচালকদের গায়ে তুলে দিয়েছেন রেইনকোট।
বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসের ১৩৫ জন রিকশাচালককে রেইনকোট বিতরণ করেন শিক্ষার্থীরা। রেইনকোট পেয়ে হাসি ফুটে উঠে রিকশাচালকদের মুখে।
৪৭ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আসলে আমরা কয়েকজন প্রথমে আলোচনা করে আইডিয়াটা ঠিক করি। ক্যাম্পাসের যে এত রিকশাওয়ালা মামা আছে, তারা বৃষ্টির সময় ভিজে ভিজেই রিকশা চালান।’
‘আমাদের ৪৭ এর অফিসিয়াল গ্রুপে পোস্ট করি যে আমাদের ব্যাচ থেকে এমন দেয়া যায় কিনা। সবাই যখন সহমত প্রকাশ করে তখন আমরা তহবিল সংগ্রহ শুরু করি। ৩৭ টা ডিপার্টমেন্ট থেকেই ক্লাস প্রতিনিধিদের মাধ্যমে টাকা তুলে বঙ্গবাজার থেকে রেইনকোট কিনে এনে আজ রিকশাচালকদের হাতে তুলে দিয়েছি। এটা করতে কয়েক দিন ধরে আমাদের খাটতে হয়েছে। কিন্তু রেইনকোট পেয়ে উনাদের মুখে হাসি দেখে আমরা যে আনন্দ পেয়েছি তা আসলে বর্ণনা করা সম্ভব না।’
‘আরও টাকা থাকলে আমরা হয়ত ক্যাম্পাসের সব রিকশাওয়ালা মামাদের গায়েই রেইনকোট তুলে দিতে পারতাম,’ বলেন মাহফুজুর।
স্টেট শাখা থেকে পাওয়া তথ্যমতে ক্যাম্পাসে বর্তমানে ৩৩০ জন রিকশাচালক রয়েছেন। যার মধ্যে ১৩৫ জনকে রেইনকোট দিতে পেরেছেন ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসের নবীনতম ব্যাচটির এমন মহতী উদ্যোগে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।