প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ মারা গেলে আমলের ভিত্তিতে পরকালে তার মর্যাদা এবং স্থান নির্ধারিত হবে। যার নেক আমলের পাল্লা ভারী তিনি জান্নাতে যাবেন। যার নেক আমল কম বা যিনি আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাস করেন না, তিনি জাহান্নামে যাবেন।
তবে শিশুদের ওপর ইসলামের কোনো বিধান নেই। তাই পরকালে স্থান নির্ধারণের জন্য শিশুদের আমলের কোনো হিসাব হবে না। শৈশবেই কেউ মারা গেল তার স্থান জান্নাতে হবে নাকি অন্য কোথাও এ নিয়ে কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য হলো—
মৃত শিশুরা জান্নাতে বসবাস করবে এবং তারা পিতা-মাতাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করবে। এক হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন—
যে মহিলার তিনটি শিশু মারা যাবে, সেই মহিলার জন্য ওই শিশুরা জাহান্নাম থেকে পর্দা স্বরূপ হবে। এক মহিলা বলল, আর দুটি মারা গেলে? তিনি বললেন, দুটি মারা গেলেও। (তারা তার মায়ের জন্য জাহান্নাম থেকে পর্দা হবে।) (বুখারি, হাদিস : ১০, মুসলিম, হাদিস : ২৬৩৩)
এই হাদিসে বলা হয়েছে মৃত শিশু নিজের মা-কে জাহান্নাম থেকে রক্ষার চেষ্টা করবে। আর যে শিশু অপরের জন্য জাহান্নামের পর্দা হবে, সে তো জাহান্নামে যেতে পারে না। বরং উভয়েই জান্নাতে যাবে। আর এ কথা স্পষ্টভাবে একাধিক হাদিসেও এসেছে যে, মুমিনদের শিশু-সন্তানরা জান্নাতে যাবে। (ফাতহুল বারী ৩/২৪৫)।
মুমিনদের শিশুরা মৃত্যুর পর কোথায় যাবে। এ বিষযে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُم مِّنْ عَمَلِهِم مِّن شَيْءٍ ۚ كُلُّ امْرِئٍ بِمَا كَسَبَ رَهِينٌ
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে আর তাদের সন্তান-সন্ততি বিশ্বাসে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ। (সূরা তুর, আয়াত : ২১)।
অর্থাৎ যারা ঈমানদার এবং তাদের সন্তানরাও ঈমানে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তায়ালা তাদের সন্তানদেরকে জান্নাতে তাদের সাথে মিলিত করে দেবেন। পবিত্র কোরআনের অন্যান্য স্থানেও এ ওয়াদা করা হয়েছে।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের সন্তান-সন্ততিকেও তাদের সম্মানিত পিতৃপুরুষদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেবেন, যদিও তারা কর্মের দিক দিয়ে সেই মর্যাদার যোগ্য না হয়।
এক হাদিসে মহানবী নবী (সা.) বলেন, সেই সত্তার শপথ; যার হাতে আমার প্রাণ আছে! গভচ্যুত (মৃত) শিশু তার নাভির নাড়ী ধরে নিজের মাতাকে বেহেস্তের দিকে টেনে নিয়ে যাবে, যদি ওই মা (তার গর্ভপাত হওয়ার সময়) ওই সওয়াবের আশা রাখে তবে। (সহিহ ইবনে মাজা, হাদিস : ১৩০৫)।
অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ী, সে তার পিতা-মাতার কাপড় ধরে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (সহীহাহ, হাদিস : ৪৩২)
এই শিশুরা পিতামাতার জন্য জান্নাতে পূর্ব-প্রেরিত ব্যবস্থাপকের মত হবে। তারা ইবরাহিম আ.-এর তত্ত্বাবধানে মধ্যজগতে বাস করবে।
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মুমিনদের (দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া) শিশুরা জান্নাতের পাহাড়ে অবস্থান করে। তাদের লালন-পালন করেন ইবরাহিম (আ.) ও সারা (আ.)। কিয়ামতের দিন তাদেরকে তাদের মা-বাবার কাছে ফেরত দেওয়া হবে। (সহিহুল জামে)
তবে নির্দিষ্টভাবে কোন শিশুকে জান্নাতি বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। যেমন জান্নাতের কাজ করলেও নির্দিষ্ট করে কোন মুসলিমকে জান্নাতি বলে বিশ্বাস করা যাবে না। (মাজমূউ ফাতাওয়া ৪/২৮১)।
পক্ষান্তরে কাফেরদের শিশু-সন্তান, অনুরূপ যারা প্রকৃতই ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানেনি, শুনেনি তাদের কাছে এবং পাগলদের কাছে কিয়ামতে আল্লাহর আনুগত্যের উপর এক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তাতে যারা উত্তীর্ণ হবে, তারা জান্নাতবাসী হবে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ৩/২৯-৩২)।