নওগাঁর মান্দায় চলমান এসএসসি পরীক্ষা- ২০২৪ এর বিজ্ঞান বিভাগের উচ্চতর গণিত এমসিকিউ পরীক্ষার দেড় ঘন্টা পর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। রবিবার (১০ মার্চ) সকাল ১০ টায় কালিকাপুর-চককালিকাপুর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ২৫ মিনিটের উচ্চতর গণিত এমসিকিউ পরীক্ষার পর লিখিত পরীক্ষার পূর্বে এ ঘটনা ঘটে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ,উপজেলা প্রশাসন ও কেন্দ্র সচিবের গাফলতির কারণে এমসিকিউ পরীক্ষার পর নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দেড় ঘন্টা পর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
তাদের অভিযোগ যে, ২৫ মিনিটের উচ্চতর গণিত এমসিকিউ পরীক্ষার পর আড়াই ঘন্টার লিখিত পরীক্ষায় ব্যাবহারিকের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার বিষয়টি জানতে পেরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরপর কোন বিরতি ছাড়াই ২ ঘন্টা ৩৫ মিনিটের লিখিত (সিকিউ) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এনে (দুপুর ১১ টা ৫৫ মিনিট থেকে দুপুর ২ টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত ) পরীক্ষা নেয়া হয় বলে জানান পরীক্ষার্থীরা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর এ উপজেলার ৮টি কেন্দ্রে ৭৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিতো । কিন্তু চকউলী বহুমুখী হাইস্কুল ও কলেজ কেন্দ্র বাতিল হওয়ায় চলতি বছর থেকে ওই কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে ৭ টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেন্দ্র গুলো হলো, গোটগাড়ী শহীদ মামুন সরকারি স্কুল এন্ড কলেজ,মান্দা শ্যামচাঁদ (এস.সি) মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কয়াপাড়া কামারকুড়ি (কে.কে) উচ্চ বিদ্যালয়, সাহাপুর ঢোলপুকুড়িয়া এলাকা (ডি.এ)উচ্চ বিদ্যালয়, মান্দা থানা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং কালিকাপুর -চক কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং জোতবাজার আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ।
পরীক্ষার রুটিনে সকাল ১০ টা- দুপুর ১ টা পর্যন্ত উচ্চতর গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও এমসিকিউ পরীক্ষার পর লিখিত পরীক্ষার সময় ভুলক্রমে ব্যাবহারিকের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সরবরাহের কারণে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির মুন্সী,মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ আলম সেখ, ট্যাগ অফিসার এনায়েত, কেন্দ্র সচিব এ.বি.এম. ফজলে রাব্বী ওরফে তারেকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান উপস্থিত ছিলেন। পরে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এব্যাপারে জানার জন্য একাধিক সংবাদকর্মী কালিকাপুর-চককালিকাপুর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাধাঁর সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে কেন্দ্র সচিব এ.বি.এম. ফজলে রাব্বী ওরফে তারেক এর মুঠোফনে একাধিকবার দেওয়ার পরেও তিনি তার ফোনটি রিসিভি না করায় তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ আলম সেখ বলেন, লিখিত পরীক্ষার সময় ভুলক্রমে ব্যাবহারিকের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সরবরাহের বিষয়টি কেন্দ্র সচিবের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করার পর তা দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির মুন্সী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ২৫ মিনিটের উচ্চতর গণিত এমসিকিউ পরীক্ষার পর লিখিত পরীক্ষার সময় ভুলক্রমে ব্যাবহারিকের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সরবরাহের বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করার পর তা দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এজন্য কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, উচ্চতর গণিত লিখিত পরীক্ষায় ভুলক্রমে ব্যাবহারিকের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট সরবরাহের বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এরপর থানা থেকে লিখিত পরীক্ষার সঠিক প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করার পর তা দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। তবে বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যার এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তার দাবি যে, বোর্ড কৃর্তৃপক্ষ উচ্চতর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্যাকেট করার সময় প্যাকেটের উপরে ভুলক্রমে ব্যাবহারিকের প্রশ্নপত্র লেখার কারণে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য,পরীক্ষা কেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে চক কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ আব্দুল আলিমকে প্রত্যাহার করার পর নুরুল্যাবাদ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ এ.বি.এম. ফজলে রাব্বীকে সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিগত সময়ে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে অনিয়মের জন্য এ.বি.এম. ফজলে রাব্বী ওরফে তারেককে ৩ বছরের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এছাড়া চলমান এসএসি পরীক্ষার বাংলা (আবশ্যিক) ২য় পত্র পরীক্ষায় দায়িত্বে অবহেলা করায় কালিকাপুর- চক কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ৩ জন শিক্ষককে পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর আগে বাংলা (আবশ্যিক) ১ম পত্র পরীক্ষায় দায়িত্বে অবহেলা করায় কালিকাপুর- চক কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের ৬ জন শিক্ষক দায়িত্বে অবহেলা করায় পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।