সোমবার , ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২রা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

মান্দায় আত্মহত্যার ঘটনায় মামলা

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

নওগাঁর মান্দায় সৎমায়ের নির্যাতন সইতে না পেরে আফরিন আক্তার রিভা (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় দুইজনের বিরুদ্ধে প্ররোচনার মামলা করা হয়েছে। শনিবার রাতে মান্দা থানায় মামলাটি করেন মারা যাওয়া স্কুলছাত্রী রিভার মা রুমালি আক্তার।
মামলায় স্কুলছাত্রী রিভার বাবা নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার কাঁটাখালি গ্রামের বাসিন্দা আকবর হোসেন (৪২) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোজিনা আক্তারকে (৩৫) আসামি করা হয়েছে। স্কুলছাত্রী রিভা মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর বাজারে একটি ভাড়া বাসায় থেকে মান্দা থানা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছিল।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, স্কুলছাত্রীর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পত্নীতলা উপজেলার কাঁটাখালি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে স্বামী ও সতীনের বিরুদ্ধে থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, স্কুলছাত্রীর বাবা আকবর হোসেন সম্প্রতি রোজিনা আক্তার নামের এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দু’সপ্তাহ আগে ওই নারীকে এনে প্রথম স্ত্রীর ভাড়া বাসায় তোলা হয়। এ নিয়ে পারিবারিক ঝামেলা শুরু হলে গত সোমবার (২১ জুলাই) প্রথম স্ত্রী রুমালি আক্তারকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় রিভা ও তার ভাই রিয়াদকে মায়ের সঙ্গে যেতে দেওয়া হয়নি।

এরপর থেকে স্কুলছাত্রী রিভা ও তার ভাই রিয়াদের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করেন সৎমা রোজিনা আক্তার। গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) সৎ মায়ের হাতে মারধরের শিকার হয় রিভা। এ অবস্থায় গতকাল শনিবার শয়ন কক্ষের দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। রিভা আত্মহত্যার আগে তার বাবা ও সৎমাকে দায়ী করে একটি চিরকুট লিখে যায়। ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে যান অভিযুক্ত রোজিনা আক্তার।
মৃত্যুর আগে বাবার উদ্দেশ্যে লিখে যাওয়া রিভার চিঠিটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।

শ্রদ্ধেয় মোঃ আকবর হোসেনঃ-
মোঃ আকবর হোসেন আপনি ঠিক কতটা খারাপ হয়ে গেছেন তা বলে বোঝানোর মত না। আপনি অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে এসে বলছেন যে আমার মা। আপনি যতটা সহজে কথাটা বলছেন ততটা সহজ কিন্তু না। এখন আমি যদি আপমার মায়ের জায়গায় আরেকটা মেয়েকে নিয়ে এসে বলতাম যে আপনি তাকে মা বলে ডাকবেন পারতেন আপনি মা বলে ডাকতে বলেন পারতেন। আমি দেখছি আমার মা আপনাকে কতটা ভালবেসেছে আর আপনি কতটা আঘাত দিসেন। আপনি ঔ মহিলার মোহে অন্ধ হয়ে আমাদেরকে মিথ্যাবাদী বলছেন আমি কথাটা কখনো কল্পনাও করিনি। আপনি আমার জীবনটাকে তচনচ করে দিসেন। আপনি আমার কাছ থেকে আমার মাকে কেড়ে নিছেন। মানুষ এতোটা খারাপ আপনাদের না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আর আমার বান্ধবীদেরকে বলব তোরা অনেক ভালো। তোরা আমার জন্য অনেক কিছু করছিস। যা তোদের আমি মুক্তি দিলাম। আর তোদের বিরক্ত করব না। সবাই বলবে মেয়েটা কতো খারাপ ওর জাহান্নামেও জায়গা হবে না। কিন্তু মেয়েটা যে কতো কষ্ট কতো অভিমান আর কতো দুঃখ নিয়ে এই পৃথিবী থেকে গেছে তা আপনারা কি করে বুঝবেন। আর পারভিন মেমকে কে কি বলছে আমি কিন্তু জানি কিন্তু আমি তার নাম বলব না। তো এতটুকুই আর কাওকে বিরক্ত করব না। আল্লাহ হাফেজ। সবার জন্য দোয়া করব। আর আপনি যে বলছেন আমি কোন ছেলের সাথে কথা বলছি কোনোদিন সময় হলে উদয়কে ফোন দিয়ে বইলেন আমি ওকে কতটা ঘৃনা করি আর ওর সাথে কখনো কথা বলছি নাকি। বইলেন হুম সময় করে। তাহলে আপনাদের ভুল ধারণাটা ভাঙবে আরকি। আমি অনেক কষ্ট করছি আরো পরকালে কষ্ট করব জানি আমি জাহান্নামে যাব কিন্তু আমার তো কিছু করার নাই। সবার কাছে বোঝা আমি। আমি চলে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনার তো হিতাহিত জ্ঞান নাই ওই মহিলার প্রেমে অন্ধ আপনি। আপনি কি জবাব দিবেন কেয়ামতের দিন। আমি শুধু মুক্তি চাই এই দুনিয়া থেকে। এই চিঠিটা কে পড়ছে জানি না তবে ওই লোক মোঃ আকবর হোসেন আমার গায়ে যেনো হাত না দেয় আর আমার কবরে মাটি না দেয় নাহলে কিন্তু আমি জাহান্নামেও শান্তি পারো না। অনেক কাথা বুকের মধ্যে চেপে নিয়ে আছি আর আমার পক্ষ্যে সম্ভবনা এভাবে বেঁচে থাকা। আচ্ছা থাকেন মালাকুল মোউত ডাকছে আমায়।
ধন্যবাদ,,
বিদায়