তিনি বলেন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীতে শক্তিধর ও বিশাল বিশাল প্রাণী থাকা সত্ত্বেও সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টির সেরা বানিয়েছেন। কেননা, মানুষের বিবেক-বুদ্ধি আছে, অন্য প্রাণীদের তা নেই। পৃথিবীতে সভ্যতার উন্নতি, অবনতি, বিকাশ, পরিবর্তন—সবকিছুর জন্য কিন্তু এই মানুষই দায়ী। মানুষের দৃষ্টিকোণ ও সৃজনশীল চিন্তাভাবনার মাধ্যমে পৃথিবীকে সাজিয়েছে নতুন নতুন রূপে। আজ থেকে ৫০০ বছর আগের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে বর্তমান মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই ভিন্ন বলা যায়। বর্বর থেকে মানুষ হয়েছে সভ্য। বাঁচতে হলে কী কী প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয়—এসব বোঝার ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি মানুষ শিক্ষার মধ্যে থাকে এবং সে শিক্ষাই সে তার ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগ করে। কেয়ামতের আগপর্যন্ত এই মানুষই পুরো পৃথিবী রাজত্ব করবে, প্রভাব বিস্তার করবে অন্য প্রাণীদের ওপর।
সমাজে থেকেই মানুষের বেড়ে ওঠা। সমাজ তাকে অনেক কিছু দেয়, আবার অনেক কিছু কেড়েও নেই। সমাজে বেড়ে উঠতে হলে পার করতে হয় বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির। যারা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে পারে, তারাই পৌঁছে উন্নতির শিখরে। এখন কথা হচ্ছে কয়জন মানুষই বা তার এ উন্নতিকে কাজে লাগায়, অন্যের মাঝে তা বিলিয়ে দেয়! বর্তমান সমাজ তো বলছে অন্য কথা। পুঁজিবাদী হওয়ার পেছনে শিল্পের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতার বিষয়টি কিন্তু মুখ্য। কেননা এ শিল্পের মাধ্যমেই কিন্তু মানুষ মানুষকে শাসন করছে, প্রভাব বিস্তার করছে। ইউরোপের জন্য শিল্পবিপ্লব হলেও এর প্রভাব আজও রয়ে গেছে। এ প্রভাব ও শাসনের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে শ্রেণিবৈষম্য। যার ফলে ধনীরা গড়ছে সম্পদের পাহাড় আর গরিবেরা হচ্ছে বৈষম্যের শিকার। স্বার্থের জন্য মানুষ জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সমাজবহির্ভূত ও অপরাধমূলক কাজে।
প্রযুক্তির উন্নতির পাশাপাশি বেড়েছে অপরাধের ধরনও। মানুষ আজ অভাবের তাড়নায়, লোভের বশবর্তী হয়ে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কাজে। কেউ অপরাধ করছে প্রকাশ্যে, কেউবা গোপনে। লোপ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, উগ্রতা, স্বার্থপরতা, ক্রোধ প্রভৃতি কারণে মানুষের মনুষ্যত্ব হারাচ্ছে। মনুষ্যত্ব লোভ পেলে মানুষ আর মানুষ থাকে না, হয়ে যায় অমানুষ, পশুর চেয়েও অধম। গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, ইভ টিজিং, দুর্নীতি ইত্যাদি হলো অমানুষের কাজ। আর এ অমানুষগুলোকেই আজ আমরা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করছি।
একটা কথা আছে, বিপদের সময় নাকি প্রকৃত মানুষকে চেনা যায়, প্রকৃত বন্ধুকে চেনা যায়। কিন্তু বর্তমানে হচ্ছে এর উল্টো চিত্র। এখন কে কাকে বিপদে ফেলে ওপরে উঠতে পারে, এ নিয়ে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। মানুষের মধ্যে ভালো খারাপ প্রভেদ আছে। ভালো মধ্যেই মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে মানুষরূপী অমানুষ। তাঁরা হলেন দেশ বা সমাজের জন্য অভিশাপ। দেশে বর্তমান মহামারির ফলে অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই আতঙ্ক চলে এসেছে। অনেক মানুষই হয়ে পড়েছে শ্রমহীন। যার ফলে তারা তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। সেখানে কিছু সাধুবেশী অমানুষ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্য নিজেরা হরণ করছে, সেই সঙ্গে করছে লুটপাট। গরিবের হক চাইতে গেল তারা হচ্ছে মারধরের শিকার। সরকার দেশের মানুষের জন্য সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা সত্ত্বেও এই মানুষরূপী হায়নারা যেন তার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে ত্রাণ দেওয়ার নামে আবার অনেকেই করছে ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজও। দেশের এ পরিস্থিতিতে তারা তাদের কর্মের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসছে। অনেকেই আবার ত্রাণ দেওয়ার নামে করে ছবিবাজি। ছবি তোলার মাধ্যমেই যেন তাদের সার্থকতা, উদারতায় নয়। তাদের মধ্যে শিক্ষার স্পর্শ হয়তো লেগেছে, কিন্তু সুশিক্ষা ও চারিত্রিক শিক্ষার স্পর্শ হয়তো তারা পায়নি।
মানুষ শুধু মানুষ হলেই হবে না, মানুষের ভেতর মনুষ্যত্ব থাকতে হবে। কেননা, মনুষ্যত্ব মানুষের জীবনে আলোকিত করে। মনুষ্যত্ব ছাড়া মানুষ মূল্যহীন। তাই সকল মানুষের উচিত মনুষ্যত্ব অর্জনের সাধনা করা, চর্চা করা। মানুষের ভেতর থেকে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলা