রবিবার , ২৪শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১লা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ৩ টি সুপারিশ

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ৬ জুলাই, ২০১৮

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তিনটি পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এগুলো হচ্ছে- শক্তিশালী প্রবিধান, কঠোর নজরদারি ও সুশাসন নিশ্চিত করা।

সংস্থাটি জানিয়েছে, শৃঙ্খলা না থাকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ভালো পারফরম্যান্স করতে পারছে না। বরং অব্যাহতভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

গত মার্চে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার আর্টিকেল ফোর মিশন সম্পন্ন করে আইএমএফ। সে মিশনের সার্বিক পর্যবেক্ষণ নিয়ে শুক্রবার সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এটা কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা ও ঋণ আদায় জোরদার করতে হবে। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে ঝুঁকির ভিত্তিতে নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে।

আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশে দৃঢ় মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক শৃঙ্খলা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছে, যা অর্থনীতিকে অনুকূল বাহ্যিক চাহিদা, উচ্চ প্রবাসী আয়, ভোগ্যপণ্যের কম দামের সুবিধা নিতে সাহায্য করেছে। এর ফলে উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, সরকারি ঋণের মধ্যম অবস্থা এবং বাহ্যিক সক্ষমতা পুনর্গঠিত হয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার বিষয়টি মধ্য মেয়াদে বেশ চ্যালেঞ্জিং বাংলাদেশের জন্য।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি রফতানি এবং প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে চলছে। বর্তমানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন। রাজস্ব বৃদ্ধি এবং সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি। রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের কর ব্যবস্থায় বিভিন্ন সংস্কার জরুরি। এজন্য বিশেষভাবে ভ্যাট আইন এবং কর প্রশাসনে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নেটগুলোয় অর্থের জোগানের জন্য অধিক রাজস্ব আহরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজস্ব আয় জিডিপির ৯ শতাংশের কম। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ও সামাজিক খাতে ব্যয় নির্বাহের জন্য রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে হবে। অথচ নিুআয়ের দেশগুলোর গড় রাজস্ব আয় জিডিপির ১৫ শতাংশ হয়ে থাকে।

আইএমএফ জানিয়েছে, বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন চালু করতে পুঁজিবাজারের বিকাশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারকে সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ না তুলে অন্য পুঁজিবাজার বা বন্ড মার্কেট থেকে অর্থ সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এছাড়া সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার সমর্থনে আইএমএফ নীতি পরামর্শ, সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

আইএমএফ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানো, বাজারের চাহিদার সঙ্গে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শ্রম আইনকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বহন করে এবং এদিকে অব্যাহতভাবে মনোযোগ ও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আইএমএফ মিশনের প্রধান ডাইসাকু কিহারা বলেন, গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে গড়ে ৬ শতাংশের ওপর রয়েছে, মাথাপিছু আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, দারিদ্র্য এবং অন্যান্য সামাজিক সূচক স্থিতিশীল রয়েছে। এ সময় বৈচিত্র্যময় রফতানি বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিুআয় থেকে মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয় এবং বিনিয়োগের কারণে ২০১৮ সালে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের মতো হতে পারে।

অর্থনীতিতে রোহিঙ্গা সংকটের প্রভাব সম্পর্কে কিহারা বলেন, অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ। অর্থনীতি ও বাজেটে এর প্রভাব এখন পর্যন্ত সীমিত, যার প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ এবং আর্থিক সহায়তা। তবে ভবিষ্যতে এ সংকট মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

অনলাইন ডেস্ক