রবিবার , ২৪শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ১লা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বেকার সমস্যা বাংলাদেশে প্রকট “দিদারুল ইসলাম”

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩

নিউজ টিভি বাংলার চেয়ারম্যান ও জাতীয় দৈনিক বর্তমান কথা পত্রিকার উপ-সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারুল ইসলাম বলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অসংখ্য সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী কর্মসংস্থানের আশায় একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দিয়ে যায়। তারা আশায় বুক বাঁধে– এই বুঝি তার ভাগ্যের শিকেটা ছিঁড়ল। এইবার বোধ হয় পরিবারের অভাব ঘুচবে। কিন্তু এত সহজ আর স্বাভাবিক নয় তাদের পেশাজীবনের সূচনা চক্র। এদিকে অনেকেই এ দেশের শিক্ষিতদের উদ্যোক্তা হতে বলেন বটে; কিন্তু উদ্যোক্তা হতে যে পুঁজি, প্রশিক্ষণ আর আমলাতান্ত্রিক সহযোগিতা লাগে, তা খুব একটা দিতে দেখা যায় না। উন্নত বিশ্বে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেন বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এ দেশে তেমন একটা দেখা যায় না।

 দিদারুল ইসলাম আরো বলেন দেশে বেকারত্বের সুযোগ নেয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। নামমাত্র মূল্যে অসহায় শিক্ষিত বেকার যুবকদের দিয়ে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো করিয়ে নেয়। অথচ এ দেশের অসাধু করপোরেট বসরা অকল্পনীয় বিলাসী জীবন যাপন করলেও কোনো সম্মানজনক জীবিকা নতুন নিয়োগপ্রাপ্তকে দেন না। এ ক্ষেত্রে তাঁদের সহজ উপায় হচ্ছে, তাঁরা স্বীয় প্রতিষ্ঠানে সরাসরি জনবল নিয়োগ না দিয়ে, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নবীন শিক্ষিত বেকারদের তাঁদের প্রতিষ্ঠানে ঢোকান।

চাকচিক্যময় সাজানো অফিসের আড়ালে কোথাও চলে ‘আধুনিক ক্রীতদাস’ প্রথা। মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করে তাদের বিশাল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার মাসিক এবং বার্ষিক টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়। ক্রেডিট কার্ড বিক্রি আর ঋণগ্রহীতা খুঁজতে খুঁজতে নব্য তরুণরা শারীরিক, মানসিক আর আর্থিকভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। প্রতিদিন বসের ঝাড়ি, চাকরি চলে যাওয়ার ভয় নিয়ে এদের দিন কাটে। চুক্তিভিত্তিক এসব চাকরির নিয়ম-কানুন এমনভাবে সাজানো; অমানুষিক শ্রম দেওয়া সত্ত্বেও বছর ঘুরতে না ঘুরতে কারও চাকরি যায় চলে।
আইনি মারপ্যাঁচের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের এমন অনাচারের বিরুদ্ধে প্রায়ই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

শুধু প্রাইভেট ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়; এমন অনৈতিক চর্চা দেখা যায় টেলিকমিউনিকেশন; কোনো কোনো ওষুধ কোম্পানির ক্ষেত্রেও। করপোরেটদের এমন কপট আচরণের সারথি হতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য থার্ড পার্টি রিক্রুটিং ফার্ম। তাদের কাজ হচ্ছে শুধু শিক্ষিত বেকারদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা। মাঠ পর্যায়ের যাবতীয় কঠিন মার্কেটিং, এন্ট্রি লেভেল, ড্রাইভিং, সিকিউরিটির কাজ ইত্যাদি। বেতন কম, বোনাস নেই, ইনক্রিমেন্ট নেই। নেই তেমন চিকিৎসা ভাতা, হাউজিং ভাতা। ছুটিছাটার বালাই নেই।

এই আধুনিক দাসপ্রথা আজ বাংলাদেশে জেঁকে বসেছে। শ্রম আইনের মারপ্যাঁচের মধ্য দিয়ে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো করে যাচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন। চাকরির এমন ফাঁদকে তারা মনে করে বেকার সমস্যার সমাধান। এই গালগপ্প তাদের প্রায়ই দিতে শোনা যায়। যেন করুণা করে চলেছে তারা বেকারদের প্রতি।

এই বর্বর ব্যবস্থা কি স্বাধীনতার চেতনাপন্থি; সংবিধানসিদ্ধ; মানবাধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? যদি তা না হয়, কীভাবে এমনটা চলছে দিনের পর দিন? এই চোরাফাঁদ দেখার যেন কেউ নেই। যদিও দুই-একটা টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিকে বিচারিক আদালত এমন অনৈতিক চর্চার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিলেন; তাতেও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি।

সড়ক বা সেতু বানিয়ে উন্নত বিশ্ব হওয়া সম্ভব নয়। দরকার নাগরিক অধিকারের গ্যারান্টি। উন্নত বিশ্বে অফিসের বস আর ক্লিনারের বেতনের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, তাদের বেতন তাদের সম্মানজনক জীবনের নিরাপত্তা দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো!
যাদের রক্ত পানি করা শ্রমে করপোরেট অফিসের যাবতীয় জৌলুস, সেই তৃণমূলের কর্মীদের বঞ্চিত করে চলছে করপোরেট কালচার। গরিব আর দুর্বলের যেহেতু দর কষাকষির সক্ষমতা কম, তাই এদের প্রতিকার চাওয়ার পথও যেন বন্ধুর!