কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কেক ও বেকারির দোকানের মধ্যে ধূমপান করতে নিষেধ করায় দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাব্বী শেখ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানাধীন রাজস্ব ভবনের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার সুদীপ্ত সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার আসামি রাব্বী শেখ (৩০) কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার নওদাপাড়া এলাকার বজু শেখের ছেলে।
র্যাব জানায়, গত ২৮ মে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা বাজারে অনিকের কেকস কিং নামক দোকানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে দায়িত্বরত ওয়াসিম আকরাম নির্ঝর ও মাসুদুর রহমান মান্নানকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর এবং গুরুতর রক্তাক্ত ও হাড় ভাঙা জখম করে। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলার ভেড়মারা থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১২ সিপিসি-১ এবং র্যাব-২ সিপিসি-৩ এর যৌথ আভিযানিক দল এবং র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উক্ত মামলার আসামি রাব্বী শেখকে ঢাকা জেলার শেরেবাংলা নগর থানাধীন রাজস্ব ভবনের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তার কাছে থেকে ৩টি মোবাইল, ৪টি সিম এবং নগদ ১১ হাজার ৫৬৫ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
গত ২৮ মে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কেকের দোকানের মধ্যে ধূমপান করতে নিষেধ করায় দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের করে কয়েকজন যুবক। এসময় দোকান মালিক ও কর্মচারীদের মারধর করে হত্যাচেষ্টা করে আহত করা হয়েছে। তাদের গুলিতে নির্ঝর নামে এক সেলসম্যান আহত হন। এ সময় তারা নগদ অর্থ লুট করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এ ঘটনায় ২৯ মে কেকস কিং ও অনিক বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক ভুক্তভোগী অনিক বাদী হয়ে ৮ জনের নামে ভেড়ামারা থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে পুলিশের প্রতি অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বাদী অনিকুর রহমান অনিক ভেড়ামারা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ফারাকপুর গ্রামের মাসুদুর রহমানের ছেলে। কেকস কিং ও অনিক বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক।
আসামিরা হলেন- ভেড়ামারার নওদাপাড়া এলাকার শাহজাহান আলীর ছেলে মিথুন সাকিব সাদু (২২), ফারাকপুর এলাকার ফারুক আলীর ছেলে ওসামা (২০), নওদাপাড়া এলাকার রশিদের ছেলে ফারুক (৪৮), একই এলাকার মৃত আব্দুল্লাহ আলীর ছেলে নিলয় (২৩), রবিন (২৩), বজু শেখের ছেলে রাব্বী শেখ (৩০), ইয়াকুব ঘটকের ছেলে রিমন (২৩) ও মির্জাপুর এলাকার শিহাব ফকিরের ছেলে রকি (২২)।
মামলার বাদী অনিক এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বুধবার (২৮ মে) দুপুরে ভেড়ামারা বাজারে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কেকস কিং নামক দোকানের মধ্যে এসে আসামি মিথুন সাকিব ও ওসামাসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩ জন আসামি দোকানের অন্যান্য ক্রেতার সামনে ধূমপান করে। তখন দোকানের দায়িত্বে থাকা আমার স্ত্রীর বড় ভাই মো. ওয়াসিম আকরাম নির্ঝর (২৮) তাদেরকে দোকানে ধূমপান করতে নিষেধ করে। এসময় আসামিরা সেলসম্যান নির্ঝরকে মারতে তেড়ে আসে। এক পর্যায়ে সে তাদেরকে প্রতিহত করতে গেলে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে দোকানে বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর ও নষ্ট করে। এতে আনুমানিক দুই লাখ টাকার ক্ষতি সাধনসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যায়।
পরবর্তীতে দুপুর দেড়টার দিকে আমার অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অনিক বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারিতে আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো রামদা, হাসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, লোহার পাইপ, লোহার রড, হাতুড়ি, হকিস্টিক, কাঠের বাটাম ও লাঠিসোঠা নিয়ে অতর্কিতে হামলা শুরু করে। দোকানে বসে থাকা আমার বাবা মো. মাসুদুর রহমানকে (৬০) চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় প্রাণে মেরে ফেলার জন্য ৬ নম্বর আসামি মো. রাব্বী শেখ তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করতে গেলে আমার বাবা প্রাণ বাচাতে ডান হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলে লোহার রডের আঘাতে তার কব্জির ওপরে লেগে হাড় ভেঙে যায়।
বাদী এজাহারে আরও উল্লেখ করেছেন, এ সময় দুই নম্বর আসামি ওসামা দোকানের ক্যাশের ড্রয়ারে থাকা নগদ ১২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরে আসামিরা তাদের হাতে থাকা লোহার পাইপ, রড, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের কেকের ৩টি ফ্রিজ, আইসক্রিমের ২টি ডিপ ফ্রিজ, ইলেকট্রিক ওভেন, সিসি ক্যামেরা, মনিটরসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এতে আনুমানিক ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। পুনরায় একই তারিখ দুপুর অনুমান ৩টার দিকে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কেকস কিং নামক দোকানে এসে তিন নম্বর আসামি মো. ফারুক তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সেলসম্যান মো. ওয়াসিম আকরাম নির্ঝরকে গুলি করলে গুলিটি তার পায়ে লেগে সে আহত হয়। এ সময় আসামিরা দোকানের অন্যান্য কর্মচারীদের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মেরে জখম করে।