আগামী বৃহস্পতিবারের (২৩ জানুয়ারি) মধ্যে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকা খুলে দিয়ে প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সংবাদকর্মীরা। এসময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সব সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে কাকরাইলের এইচআরটি ভবন ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওছার হোসেন।
তিনি বলেন, ভোরের কাগজের নির্বাহী সম্পাদক এ কে সরকার স্বাক্ষরিত নোটিশে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করা হয়েছে, এমন কোনো ঘোষণা আমরা দেখতে পাইনি। আমরা বিশ্বাস করি ভোরের কাগজের প্রকাশনা বন্ধ করা হয়নি। ভোরের কাগজের প্রকাশনা অব্যাহত থাকবে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে প্রধান কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়ে ভোরের কাগজের প্রকাশনা পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেওয়া হোক। আমরা ভোরের কাগজের অপমৃত্যু হোক তা চাই না। আমরা ভোরের কাগজকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। সারাজীবন আমরা নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কথা দেশের জনগণকে জানাতে, সরকারকে জানাতে, রাজনৈতিক নেতাদের অবহিত করতে কাজ করেছি। আমাদেরকে কখনো নিজেদের কথা গণমাধ্যমের সামনে বলতে হবে তা কোনোদিন ভাবিনি। সেই অভাবনীয়, অকল্পনীয় কাজটি আজ আমাদের করতে হচ্ছে।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে খোন্দকার কাওছার হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরে ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরের কাগজ সম্পাদক গ্রেপ্তার হন। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এরপর আমরা দেখলাম ভোরের কাগজের মালিক সাবের হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরে এ কে সরকার ভোরের কাগজে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে নিয়োগপত্র নিয়ে আমাদের অফিসে হাজির হয়েছেন। এ কে সরকার মূলত সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন কর্ণফুলী গ্রুপের আবাসিক পরিচালক। গণমাধ্যম বিষয়ে তার কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা নেই বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। আমরা তার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন তিনি আমাদের জানালেন সাবের হোসেন চৌধুরী আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান। এক মিটিংয়ে আমাকেসহ আটজন বিভাগীয় প্রধানের নাম চূড়ান্ত করে ওনাকে জানানো হলে তিনি ৩০ নভেম্বর আমাদের সঙ্গে বসলেন। সেখানে অর্থ বিভাগের প্রধান আর্থিক সংকটের কথা জানালে তিনি সরাসরি প্রশ্ন করলেন, গত ১৫ বছরে যে আয় হয়েছে সেই টাকা কোথায়? অর্থ বিভাগ তার কোনো উত্তর দিতে পারেনি। অফিসে কানাঘুষা শুরু হলো বিরাট একটি কর্মী বাহিনীকে ছাঁটাই করা হবে। সেই তালিকা তৈরি হয়েছে। আমরা জানতে চাইলে কোনো উত্তর পাইনি। বাধ্য হয়ে এইচআরটি ভবনে একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে এ কে সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি অকপটে তা স্বীকার করলেন।
‘তিনি বললেন, সাবের সাহেব পত্রিকা চালাবেন না। ডিক্লারেশন বাঁচাতে মাত্র ৫০০ কপি ছাপানো হবে। সাংবাদিক-কর্মচারীদের শ্রম আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করে বিদায় দেওয়া হবে। বিষয়টি আমরা বিভাগীয় প্রধানদের সভায় উপস্থাপন করলে শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। অফিসের মধ্যে যারা নানা রকম বৈধ-অবৈধ সুবিধাভোগী রয়েছেন তারা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তালবাহানা শুরু করেন। এ কে সরকার ও সাবের হোসেন চৌধুরীকে ভুল বুঝিয়ে তারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চান। মালিকপক্ষের স্বাভাবিক অবস্থানকে অস্বাভাবিক অবস্থান নিতে বাধ্য করে।’
প্রধান প্রতিবেদক আরও বলেন, পরিস্থিতি টের পেয়ে আমরা সাবের হোসেন চৌধুরীকে অবহিত করতে এ কে সরকারের মাধ্যমে তিনটি চিঠি পাঠাই। কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরীর পক্ষ থেকে কোনোরকম যোগাযোগ করা হয়নি। নির্বাহী সম্পাদক একদিন ফোন করে দাবি-দাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। তখন আমরা বলি, ভোরের কাগজ অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে ঘোষণা দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ৯০০ টাকা কলাম ইঞ্চি হারে বিজ্ঞাপন বিলসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু আমাদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেনি, নিয়োগপত্র দেয়নি। যদি আমাদের ছাঁটাই করা হয় তাহলে অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের সব সার্ভিস বেনিফিটসহ এরিয়ার বেতন পরিশোধ করতে হবে। যদি ছাঁটাই করা না হয়, তবে যেদিন থেকে যিনি ভোরের কাগজে কাজ শুরু করেছেন সেই তারিখ থেকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। অষ্টম ওয়েজ বোর্ডে প্রাপ্য সব বকেয়া বেতন দিতে হবে। এখন থেকে ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা দিতে হবে।
খোন্দকার কাওছার হোসেন বলেন, আমাদের এ দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে হঠাৎ অফিস বন্ধ করে সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেকারত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। হাজারের ওপর পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পেটে লাথি মারা হয়েছে। আমরা মনে করি ভোরের কাগজের মালিকপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুটিকয়েক স্বার্থবাদী কুচক্রীর চক্রান্তে। ওইসব চক্রান্তকারীরা আমাদের নামে মামলা দেওয়ার জন্য রমনা থানায় গিয়েছে গত রাতে। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিয়েছে কি না আমরা জানি না। অফিস বন্ধ করার পরও গতকাল (সোমবার) গভীর রাতে অফিসে গিয়েছে। কি করেছে বা কি নিয়ে এসেছে তা আমরা জানি না।
কুচক্রীরা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমরা দেখেছি। সেখানে কুচক্রীদের হোতা বার্তা সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দীনের বরাতে আমাদের নামে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে কতিপয় সাংবাদিক ও কর্মচারীরা রয়েছে বলা হয়েছে। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি হাতেগোনা কয়েকটি কুচক্রী ছাড়া পুরো ভোরের কাগজ পরিবার এ দাবি-দাওয়ার সঙ্গে একাত্ম রয়েছে। এ দাবি সবার। আমাদের সঙ্গে বাইরের লোক ছিল বলা হয়েছে। আমরা কোনো বাইরের লোক সঙ্গে রাখিনি, তাদের দাবি মিথ্যা ও বানোয়াট। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা অনতিবিলম্বে ভোরের কাগজ খুলে দেওয়ার দাবি জানাই। পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবি করছি। সঙ্গে আমাদের সব পাওনা পরিশোধ করার দাবি জানাই।
এসময় ভোরের কাগজের ১১টি বিভাগের প্রধানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।