বৃহস্পতিবার , ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৩ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

বরগুনায় মেয়েকে ধর্ষণের ৬ দিন পর বাবাকে হত্যা

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫

বরগুনায় মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণ করার অভিযোগে বিচার চেয়ে মামলা দায়েরের ৬ দিনের মাথায় হত্যার শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগীর বাবা মন্টু চন্দ্র দাস (৩৫)। নিজ বসতবাড়ির পেছনের একটি ঝোপঝাড় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত মন্টু বরগুনা পৌরশহরের জাকির হোসেন নামে এক মুরগি ব্যবসায়ীর দোকানের কর্মচারী ছিলেন। স্বজনদের দাবি ধর্ষণ মামলা করায় অভিযুক্তের স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।

বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরের দিকে বরগুনা সদর থানায় একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মন্টু চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হালিম। এর আগে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার দিকে বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালিবাড়ি করইতলা এলাকার নিজ বাড়ির পেছন থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের আগে নিহত মন্টুর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার হয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৫ মার্চ বরগুনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মন্টু। পরে ওই দিনই মামলায় অভিযুক্ত একমাত্র আসামি সৃজীব চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পরে মঙ্গলবার মধ্যরাতে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে নিজ বাড়ির পেছনে একটি ঝোপঝাড় থেকে মন্টুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়াও এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখন পর্যন্ত চার জনকে আটক করা হয়েছে।

নিহত মন্টুর স্বজন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী শিখা রানীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় মন্টুর। এ সময় তিনি স্ত্রীকে জানান বিক্রির উদ্দেশ্যে গাড়িতে আসা মুরগি দোকানে নামিয়ে বাসায় ফিরতে দেরি হবে। পরে দীর্ঘ সময় পার হলেও মন্টু বাড়িতে না ফিরলে তার মোবাইল ফোনে আবারও কল করেন স্ত্রী শিখা রানী। তবে এ সময় ফোন রিসিভ না করায় এবং বাড়ির পেছনে মোবাইলের আওয়াজ শুনতে পেয়ে সেখানে গিয়ে ঝোপঝাড়ের মধ্যে মন্টুর মরদেহ পরে থাকতে দেখতে পান শিখা রানী। পরে পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত মন্টুর স্ত্রী শিখা রানী বলেন, রাতে নির্ধারিত সময়ে বাসায় না ফেরায় আমার স্বামীর মোবাইলে ফোন কল দিলে বাড়ির পেছন থেকে আওয়াজ শুনতে পাই। ফোন রিসিভ না করায় বাড়ির পেছনে গিয়ে তাকে পড়ে থাকতে দেখি। পরে আমি অন্য সব স্বজনদেরকে জানাই।

তিনি আরও বলেন, মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বিচারের দাবিতে থানায় একটি মামলা করেন আমার স্বামী। অভিযুক্ত আসামি জেল হাজতে থাকায় তার স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।

নিহত মন্টুর বোন কনক রানী বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে মন্টুর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। এ সময় তার দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তরা মিলে যাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছে বলে জানান তিনি। আমি মেয়েকে নিয়ে তাকে সাবধানে থাকতে বলি। পরে রাতে মন্টু বাড়ি ফেরেনি এমন খবর শুনতে পেয়ে তার বাড়িতে গিয়ে বাড়ির পিছনে মন্টুকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হালিম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে মন্টুকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। ইতোমধ্যেই আমরা গোপন তদন্ত শুরু করেছি এবং তথ্য যাচাই বাছাই ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।